স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ৪ জুন: সুদূর গুজরাট থেকে নিজের বাড়ি রায়গঞ্জ শহরে ফিরলেও পরিবার পরিজন তাঁকে ঘরে তুলল না, ঠাঁই হল না কোনও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারেও। বাধ্য হয়ে রাস্তার ধারে কাউন্সিলরের দেওয়া পলিথিন টাঙিয়ে বেঞ্চে শুয়ে রাত কাটাচ্ছেন রায়গঞ্জ দেবীনগরের বাসিন্দা রাজেশ সরকার। স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ খাবার দিলে খাচ্ছেন নইলে অভুক্তই থেকে দিনাতিপাত করছেন তিনি। করোনা আক্রান্ত না হয়েও গুজরাট থেকে আসার কারনে পরিবারও তাঁকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর ও ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চাপে নিরুপায় হয়ে শুধুমাত্র একখানি পলিথিন দিয়েই দায় সেরেছেন।
রায়গঞ্জ শহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেবীনগর এলাকার বাসিন্দা রাজেশ সরকার পরিবারের মুখেই অন্ন জোগারের জন্য ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন। রাজেশবাবু গুজরাটের একটি মোটরবাইক তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশজুড়ে চলা লক ডাউনের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কারখানা। দুদিন আগে ট্রেনে চেপে মালদায় নেমে রায়গঞ্জ শহরে ফিরে তিনি প্রথমেই রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখান থেকে একটি সুস্থতার সার্টিফিকেটও তাঁকে দেওয়া হয়। এরপর তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে তাঁর পরিবারই তাঁকে গ্রহন করেনি। এমনকি বাড়ির বারান্দাতেও স্থান দেওয়া হয়নি তাঁকে।
এই অবস্থায় স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অভিজিৎ সাহার দ্বারস্থ হন তিনি। অভিজিৎবাবু নিজে রাজেশের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা বললেও পরিবারের লোকজন ও এলাকার বাসিন্দারা রাজেশকে এলাকায় রাখতে নারাজ। পারিপার্শ্বিক চাপে পড়ে নিরুপায় হয়ে কাউন্সিলর অভিজিৎ সাহা তাকে একটি পলিথিন দেন। দেবীনগর এলাকায় রাস্তার ধারে সেই পলিথিন টাঙিয়ে বেঞ্চের উপর শুয়ে অসহায়ভাবে রাত কাটাতে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিক রাজেশ সরকারকে। জোটেনি সরকারি কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যাবস্থাও। স্থানীয় বাসিন্দারা ও পরিবারের লোক এসে মাঝেমধ্যে খাবার দিচ্ছে আবার কোনওসময় তাও জুটছে না তার। এমনই দুঃসহ অবস্থার মধ্যে থেকে রাজেশ সরকার এখন সরকারি সাহায্যের আশায় তাকিয়ে রয়েছেন। অসহ্য গরমে চরম কষ্টের মধ্যে রাস্তার ধারে দিন কাটাচ্ছেন, পরিবারের জন্যই ভিনরাজ্যে রোজগার করতে যাওয়া রাজেশ সরকার।