“টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার টোপ হিসেবে আমাকে ব্যবহার করেছিল,” অভিযোগ নদিয়া জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতির স্ত্রীর

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ২৪ আগস্ট: টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার জন্য যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়, তখন নদিয়া জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি রাকেশ পাড়ুইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন তারই সহধর্মিনী। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন, তাকে সামনে রেখেই নাকি বিগত দিনে প্রাথমিক শিক্ষক পদ, স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা তোলানো হয়েছে। যার এগ্রিমেন্টে স্ত্রী শ্রাবণী পারুই দাসের নাম উল্লিখিত থাকলেও, মূলত রাকেশ পাড়ুই তাকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন। এবং সেই টাকা শেষ হতেই আবারো এ ধরনের কাজ করানোর জন্য তাকে বাধ্য করা হত। অন্যথায় কপালে জুটতো মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার। এমনই চাঞ্চল্যকর ভিডিও বক্তব্য লাইভ করে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন স্ত্রী শ্রাবণী দেবী।

তিনি জানান, এই অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছায় গত বছর আগস্ট মাসে। তিনি যখন একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন বাপের বাড়িতে। সেখানেও তাকে নানা রকম ভাবে ভয় দেখানো হয়। সম্প্রতি তিনি তার বৃদ্ধ বাবা এবং অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গেলে হরিণঘাটায় তিন নম্বর ওয়ার্ডের শাসকদলের কাউন্সিলরের প্রভাব খাটিয়ে, তার বাপের বাড়িতে তালা মেরে দেওয়া হয়। এমনই নানান অভিযোগ নিয়ে, তিনি হরিণঘাটা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে সেখানে অভিযোগ নেওয়া হয়নি, এমনই মত ব্যক্ত করেছেন তিনি। অবশেষে বাধ্য হয়ে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান শ্রাবণী দেবী। এবং এই মর্মে আইনের দ্বারস্থও হন তিনি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে হরিণঘাটা তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রাবণী দাস এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোহনপুরের বাসিন্দা রাকেশ পাড়ুই নিজেরা পছন্দ করেই বিয়ে করে। বর্তমানে তাদের পাঁচ বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। রাকেশ বাবু বর্তমানে দু’নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। শ্রাবণী দেবীর বাবা রেল পুলিশে কর্মরত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের পোস্ট দেখে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রানাঘাট কলেজের দর্শনের অধ্যাপক ড: সোমনাথ কর। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া পশুপক্ষীদের প্রতি অমানবিক আচরণ হোক বা অসামাজিক কিছু.. প্রায় সকল বিষয়ে পূর্বে একাধিকবার সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর মতে, একজন মহিলা তার নাবালক বাচ্চা ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে কাতর ভাবে প্রার্থনা করছেন, শাসক দলের ক্ষমতার জোরে ওই অসহায় মানুষগুলোর প্রতি অত্যাচার এবং তাঁর ভয়ে তিনি বাড়িছাড়া, এমত অবস্থায় একজন শিক্ষক তথা সর্বোপরি মানুষ হিসাবে এই ঘটনার তীব্র ভাবে নিন্দা জানাচ্ছি।

রাজনীতিগতভাবে তিনি নদিয়া জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হলেও, এই রকম পারিবারিক বিষয়ে দলীয়ভাবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি কোনো ব্যক্তির পারিবারিক বিষয়ে মাথা ঘামায় না। কিন্তু একজন অধ্যাপক হিসেবে ছাত্রনেতার এই আচরণ তাকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন ভবিষ্যতে ক্ষমতা বা ভয় দেখিয়ে নয়, ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে সে সকলকে জয় করুক ও তার সংসার পুনর্গঠিত হোক।

রাকেশ বাবুর স্ত্রী শ্রাবণী দেবীর প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কার কথা অবশ্য সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল একাধিকবার, কিন্তু রাকেশ বাবুর প্রতিক্রিয়া না পাওয়ার কারণে আমরা অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন। তবে গতকাল আমরা তার প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, তিনি জানান, সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে ভরসা করে কিছু বলা যায় না। পারিবারিক বিষয়ে যদি কেউ মন্তব্য করেন তাহলে বুঝতে হবে তারা রাজনীতির উদ্দেশ্যে করছেন। একান্তই ব্যক্তিগত বলে সব কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লেখ করতে পারছি না। তবে আইনের শরণাপন্ন হয়েছেন, সেখানেই যাবতীয় যা প্রমাণ দেওয়ার দেবো। তবে শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসকে কালিমা লিপ্ত করার জন্যই বিরোধীরা চক্রান্ত করে এ ধরনের পারিবারিক বিষয়ে নাক গলাচ্ছে বলে তার অভিমত।

তবে আইনই যে শেষ কথা বলবে, তা বুঝিয়ে দেন রাকেশ বাবু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *