ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ি ছাড়ার জন্য চাপ মালিকের, উত্তর দিনাজপুরে জেলা শাসকের দ্বারস্থ পরিযায়ী হকাররা

আমাদের ভারত, উত্তর দিনাজপুর, ৪ মে: একমাসের বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় ভিন রাজ্যের হকারদের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন বাড়ির মালিক। লকডাউনের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে দিলে তারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন। “হয় তাদের নিজেদের বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হোক না হলে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হোক” এই দাবিতে আজ পরিযায়ী হকাররা উত্তর দিনাজপুর জেলা শাসকের দ্বারস্থ হলেন। জেলা শাসক জানিয়েছেন, ভিনরাজ্যের হকারদের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি মহকুমা শাসককে দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশ অমান্য করলে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ নেবার আশ্বাস দিয়েছেন।

বাড়ির মালিকের দাবি, দীর্ঘ দুই মাস যাবদ বাড়ি ভাড়া পাচ্ছেন না। বাড়ির ভাড়া ছাড়াও মোটা অঙ্কের বিদ্যুতের বিল তাকে মাসে মাসে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই অবস্থার জন্য তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন।

ভিন রাজ্যের কোনও ব্যক্তি অসহায় অবস্থায় কোথাও থাকলে সরকার তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বাড়ির মালিকদের স্পষ্ট ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কাউকে ভাড়ার টাকার জন্য চাপ দেওয়া যাবে না। আর লকডাউনের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার কথাও বলা যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশের পরেও তাঁর দলের রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অনিল দেবনাথ বাড়ি ছেড়ে দেবার জন্য ভিন রাজ্যের হকারদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ।

রায়গঞ্জের কর্নজোড়া এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ৩৬৮ জন ভিন রাজ্যের সেলসম্যানরা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন।লকডাউনের কারণে এই সমস্ত সেলসম্যানদের অবস্থা খুবই করুন। কাজ না থাকার কারণে তাদের আয়ও নেই। ফলে প্রতিদিন খাওয়াও জুটছে না। কমলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এই সমস্ত সেলসম্যানদের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছিল। যখন তারা দুই বেলা দুমোঠো ভাত যোগাড় করতে পারছেন না তখন তারা বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করবেন কোথায় থেকে? লকডাউনের পর থেকে তারা বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতেই পারেননি।

রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য অনিল দেবনাথ তার বাড়িতে থাকা সেলসম্যানদের বাড়ি ছাড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ। চাপের মাত্রা বেড়ে যাওয়া আজ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভিনরাজ্যের সেলসম্যানরা উত্তর দিনাজপুরের জেলা শাসক অরবিন্দ কুমার মীনার দ্বারস্থ হন। তাদের দাবি, অবিলম্বে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে নাহলে তাদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা শাসক এই অভিযোগ পাবার পরই বিষয়টি রায়গঞ্জ মহকুমা শাসককে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার নির্দেশ দিয়েছেন।

জেলা শাসক অরবিন্দ কুমার মীনা জানান, সরকার ভিনরাজ্যের আটকে পড়া ব্যাক্তিদের সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সরকারি এই নির্দেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেবার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা শাসক।

বাড়ি মালিক তথা তৃণমূল কংগ্রেস রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অনিল দেবনাথের দাবি, লকডাউনের আগেই তাদের বাড়ি ছেড়ে দেবার জন্য বলা হয়েছিল।লকডাউন চলাকালীন দীর্ঘ দুই মাসের বাড়ি ভাড়া বকেয়া পড়েছে। বিদ্যুৎ বিল বাবদ মোটা টাকা তাকে গুনতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি তাদের ব্যায় ভার বহন করতে পারছেন না। প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে তারা নিজ রাজ্যে ফিরে যাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *