ঝাড়গ্রাম গার্লস স্কুলে টিফিন চলাকালীন হনুমানের তাণ্ডব, জখম এক ছাত্রী

আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ১২ জুলাই: ঝাড়গ্রাম গার্লস স্কুলে টিফিন চলাকালীন হনুমানের তাণ্ডব। ঘটনায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতা স্থানান্তর করা হলো এক ছাত্রীকে। বনদপ্তরের তৎপরতায় খাঁচাবন্দি করা হয়ছে হনুমানটিকে। ঘটনাটি ঘটে বুধবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবা এলাকায় অবস্থিত ঝাড়গ্রাম ননীবালা বালিকা বিদ্যালয়ে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর দু’টোর সময় স্কুলে টিফিন চলাকালীন সময়ে স্কুল চত্বরে ঢুকে পড়ে একটি বিশাল আকৃতির হনুমান। টিফিন চলার কারণে ছাত্রীরা স্কুল চত্বরের বাইরে ঘোরাফেরা করছিল। স্কুল চত্বরে থাকা একটি বকুল গাছের তলায় বসে পড়ে হনুমানটি। হনুমানটিকে দেখার জন্য ভিড় করে ছাত্রীরা। হঠাৎ করে হনুমানটি ছাত্রীদের তাড়া করে। হনুমানটি একটা ছাত্রীর পিঠে গিয়ে সজোরে লাথি মারে এবং ছাত্রীটি ছিটকে পড়ে যায়। স্কুলের বারান্দার প্লাস্টারের বিটে ছাত্রীর মাথা আঘাতপ্রাপ্ত হয় ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে ছাত্রী। তাকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ঝাড়গ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্রীর নাম সঞ্চিতা মান্না। দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তার বাড়ি রাধানগর গ্রামে। এই ঘটনার পরে স্কুল চত্বরে উৎপাত চালাতে থাকে হনুমানটি। ঝাঁপ দিয়ে প্রধান শিক্ষিকার গাড়ির কাঁচও ভেঙ্গে দেয় হনুমানটি। স্কুল চত্বরের মধ্যেই একটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল, সেখানের এক রাজমিস্ত্রি তার বুদ্ধির জোরে একটি ঘরের মধ্যে হনুমানটিকে জানলা দরজা বন্ধ করে আটকে দেয়। ছাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঝাড়গ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ছাত্রীটিকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়। বিষয়টি জানানো হয় রাজ্যের মন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়িকা বীরবাহা হাঁসদাকে। বীরবাহা এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। তিনি খবর পেয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতালে পৌঁছায়। কলকাতায় পাঠানোর সমস্ত বন্দোবস্ত করে দেন মন্ত্রী খোদ নিজেই। অ্যাম্বুলেন্সে করে ছাত্রীর সঙ্গে তার বাবা-মা রওনা দেয় কলকাতার উদ্দেশ্যে। স্কুলের মধ্যে বন্ধ করে রাখা হনুমানটিকে পাকড়াও করার জন্য বনদপ্তর এর ঐরাবৎ গাড়িতে খাঁচা নিয়ে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কের রেঞ্জ অফিসার অতুলপ্রসাদ দে ও তার টিম পৌঁছায়। বিশেষ কৌশল করে হনুমানটিকে খাঁচাবন্দি করা হয়, তারপরে ঐরাবত গাড়িতে হনুমানকে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অরুন্ধতী সেন বলেন, “বিদ্যালয়ে টিফিন টাইম চলাকালীন একটি হনুমান হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে এবং একটি ছাত্রীকে সোজোরে ধাক্কা মারে, যার জেরে ছাত্রীটি মাথায় গুরুতরভাবে আঘাত পায়। আমরা তড়িঘড়ি ছাত্রীটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাই এবং তার অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় কলকাতায় স্থানান্তর করে । বিষয়টি মন্ত্রীকে জানালে তিনি তৎক্ষণাৎ পৌঁছায় এবং সমস্ত বন্দোবস্ত করে দেন । বনদপ্তরের কর্মীরা এসে হনুমানটিকে পাকড়াও করে নিয়ে যায়।”

জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কের রেঞ্জ অফিসার অতুলপ্রসাদ দে বলেন, “মানুষের ভক্তির জন্য হনুমানের স্বাভাবিক আচরণ মাঝেমধ্যে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ দেখলেই তারা মানুষের কাছে যাচ্ছে ভাবছে তাদের কিছু খেতে দিবে আর এই ভাবেই অঘটন ঘটছে। বন্যপ্রাণ থেকে মানুষের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *