জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১৮ মে:’কয়লা কেন, এসএসসি, সারদা, নারদা সহ ভবিষ্যতে যে কোনো মামলায় ইডি, সিবিআই তদন্তে যদি যোগসাজশের প্রমাণ পায়, এক হাতে প্রমাণ আর অন্য হাতে আমাকে ফাঁসির মঞ্চে তুলুন। দুর্নীতির দায়ে শাস্তির দৃষ্টান্ত তৈরী করুন।’ বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তৃণমূল সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে এদিন আদালতের কষ্ট ইম্পেস প্রসঙ্গে বলেন, আইনের ওপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে। পাশাপাশি এগরা কান্ডে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই আঙ্গুল তুললেন তিনি।
প্রসঙ্গত, দরজায় কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্র সহ নানান দিকে আষ্টেপিষ্টে দুর্নীতিতে জড়িয়ে তৃণমূল। তার ওপর কয়লা, গরু পাচারে বিদ্ধ শাসক দলের একাধিক নেতা। আর ওই ইস্যুকে হাতিয়ার করেছে গেরুয়া শিবির। পাল্লা দিয়ে দুর্নীতিকে ইস্যু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাম শিবির। তার ওপর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবারের বিষয় দলীয় কর্মসূচিতে বারংবার প্রকাশ্যে এসেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সংগঠনকে মজবুত রাখতে আসরে নেমেছে তৃণমূল সাংসদ তথা তৃণমূলে সেকেন্ড ইন্ কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েকদিন ধরে জেলায় জেলায় নব জোয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ঝড়বৃষ্টির দরুন ব্যাহত হয় কয়েকটি কর্মসূচি।
বৃহস্পতিবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার সফর সেরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়ার পথে রওনা দেন নব জোয়ার কর্মসূচিতে। যাওয়ার পথে দুর্গাপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। উল্লেখ্য, আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য কুন্তল ও অভিষেক দু’জনকেই ২৫ লক্ষ টাকা করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করার নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। সে প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “বিচার ব্যাবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে, যেকোনো তদন্তকারী সংস্থার মুখোমুখি হতে তিনি প্রস্তুত। ডিভিশন বেঞ্চ কিংবা সুপ্রিম কোর্টের দরজা খোলা রয়েছে, অবশ্যই সেখানে আপিল করব।
যদিও জরিমানা প্রসঙ্গে কার্যত তিনি বিচার ব্যবস্থাকে বিঁধলেন। তিনি বলেন, “যারা কথায় কথায় পিআইএল করে, তাদের কোন জরিমানা করা হয় না। যাদের কনভয়ে মানুষের মৃত্যু হলে যারা রক্ষাকবচের আবেদন করে। তাদের জরিমানা করা হয় না। আমি অধিকারকে সামনে রেখে বিচারব্যবস্থার দ্বারস্থ হয়েছি বলে আমায় জরিমানা করা হল।” এদিন এগরা কান্ডে পাল্টা কেন্দ্র সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলে তিনি বলেন, “রাজ্যের ২ কোটি ৬৫ লক্ষ জবকার্ডধারীর টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। ২০ লক্ষ পরিবার অধিকার থেকে বঞ্চিত। ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি প্রাপ্য টাকা বন্ধ করে রেখেছে। দু বছর ধরে ১০০ দিনের কাজের টাকা না পাওয়ায় এগরার দু মহিলা বাধ্য হয়ে বাজি কারখানায় কাজ করত। বিজেপি মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে। এগরার ঘটনায় কেন্দ্র সরকার দায় এড়াতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।”
তিনি বিজেপিকে আরও একহাত নিয়ে বলেন, “দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার ইডি, সিবিআই নিয়ে রাজনীতি করেন। পরিষেবা নিয়ে রাজনীতি করুন। বেহাল রাস্তা উন্নয়ন নিয়ে বলুন।” তিনি বলেন, “আদালতে এনআইএ তদন্তের দাবীতে যেতেই পারেন। আদালতের রায়ে ভীতসন্ত্রস্ত নই। গাঁয়ের জোরে নব জোয়ার থামানো যাবে না। কয়লা কেন, এসএসসি, সারদা, নারদা সহ ভবিষ্যতে যেকোন মামলায় ইডি, সিবিআই তদন্তে যদি আমার বিরুদ্ধে যোগসাজশের প্রমান পায়, তাহলে এক হাতে প্রমান আর অন্য হাতে আমাকে ফাঁসির মঞ্চে তুলুন। দুর্নীতির দায়ে শাস্তির দৃষ্টান্ত তৈরী করুন।’