সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৭ এপ্রিল: কেন্দ্র এবং রাজ্যের হিসেবে ফারাক যতই থাক, রাজ্যে যে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে গিয়েছে, তা একপ্রকার মেনেই নিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। বৃহস্পতি থেকে শুক্রবারের মধ্যে ২৪ ঘন্টায় ফের নতুন করে সংক্রামিত হলেন ২২ জন। উল্লেখ্য, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছিলেন ২৪ জন। এদিন আরও নতুন ২২ জন সংক্রামিত হওয়ায় রাজ্যের হিসেবেই মোট করোনা সংক্রমণের হিসেব দাঁড়াল ২২৭ জন।
এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ৪ জন। ফলে রাজ্যে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা ৫৫ জন। এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৬২ জন। গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে আর কারও নতুন করে মৃত্যু হয়নি।
অন্যদিকে, শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আপডেট অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় করোনা সংক্রামিত হয়েছেন ২৪ জন। রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৫৫। সেরে উঠেছেন ৫১ জন। মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আপডেট অনুযায়ী রাজ্যে করোনা অ্যাকটিভ সংখ্যা হওয়ার কথা ১৯৪ জন। কিন্তু আজ বিকেলে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানালেন বাংলায় করোনা অ্যাকটিভ ১৬২ জন। যা রাজ্যের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ফলত রাজ্য এবং কেন্দ্রের তথ্যের মধ্যে ফারাক অনেকটাই।
তবে এদিন শুধু সংক্রমণ আর সুস্থ হওয়ার সংখ্যাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। সমস্ত জেলা প্রশাসক বিডিওদের সঙ্গে এদিন বৈঠক করে তিনি ২ টি জায়গাকে প্রবল স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেন। জায়গা দুটি হল হাওড়া এবং উত্তর কলকাতা। একই সঙ্গে বিপজ্জনক সীমার আওতায় থাকা উত্তর ২৪ পরগনাকেও বিশেষ নজর দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের বৈঠকে উল্লেখ করেন, “সংক্রমণের বাড়াবাড়ি দুটো এলাকায় সীমাবদ্ধ। দুটো জায়গা থেকেই বেশি কেস আসছে, হাওড়া ও উত্তর কলকাতা। এই দুটো এলাকায় কড়া হাতে লকডাউন করতে হবে। দরকার হলে রাস্তায় সশস্ত্র পুলিশ নামবে। দরকারে পুলিশ খাবার পাঠিয়ে দেবে বাড়িতে বাড়িতে, তবে মেলামেশা বন্ধ করতেই হবে। হাওড়া ও কলকাতা আগামী ১৪ দিনের মধ্যে অরেঞ্জ জোনে নিয়ে আসতে হবে।”
উত্তর ২৪ পরগনার কথা আলাদা করে উল্লেখ করে, বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “ডেঙ্গুও শুরু হয় উত্তর ২৪ পরগনাতেই। করোনাতেও এটি রেড জোন হয়ে গেছে। আরও আগ্রাসী ভাবে কাজ করতে হবে সকলকে, প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। ১৪ দিনের মধ্যে একে গ্রিন জোনে আনতে হবে।” একই কথা মেদিনীপুর, হুগলি, মালদা এবং মুর্শিদাবাদ নিয়েও বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বৈঠক শেষে ভবানীপুর এলাকার বিভিন্ন রেশন দোকানে পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সময়ে কারোর যাতে রেশন পেতে অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নবান্নে ভিডিও কনফারেন্স সেরেই মুখ্যমন্ত্রী হানা দেন দক্ষিণ কলকাতার একটি রেশন দোকানে। কথা বললেন রেশন দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে। সঙ্গে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অন্যান্য আধিকারিকরা। ঠিকমতো সামগ্রী পাচ্ছে কি না, নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে দেওয়া হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়,নিজে হাতে করে নিয়ে আসেন সবুজ রঙের মাস্ক। যাদের মুখে মাস্ক ছিল না, তাদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী নিজে মাস্ক বিলি করেন।