বিশেষ প্রতিনিধি, আমাদের ভারত, ২ নভেম্বর: মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে দলের নেতৃত্বকে তোপ দেগেছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। তাঁর এই তোপে দলের বিভিন্ন স্তরে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরার মাটিতে দাঁড়িয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই শিবির ত্যাগীদের দালাল বলে কটাক্ষ করে ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন রাজ্য বিজেপি প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। লিখেছিলেন, “অনেক দালাল নির্বাচনের আগে আমাদের দলে ঢুকে গিয়েছিলেন। কিছুজন গিয়েছেন, কিছু এখনও রয়েছেন। তাঁরা উৎপাত করছেন।” অর্থাৎ বুঝিয়েছিলেন ওই দলবদলুদের জন্যই বিজেপির এই পরিণতি। মঙ্গলবার সেই পোস্টটি রি-টুইট করে দলকেই তীব্র আক্রমণ করলেন তথাগত রায়। একের পর পরাজয়ের জন্যও দুষলেন দলকেই।
প্রথমে সকালে তথাগতবাবু টুইট করেন। সওয়া ন’টায় সেটি ফেসবুকে আপলোড করেন। ৯ ঘন্টা বাদে, সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় সেটিতে লাইক, মন্তব্য ও শেয়ার হয় যথাক্রমে ১ হাজার, ১২৭ ও ৩১। ইতিমধ্যে বিধানসভার চার কেন্দ্রের ফল প্রকাশ হয়। প্রথম থেকেই বড় ব্যবধানে জিততে থাকে তৃণমূল।
সাড়ে তিনটে নাগাদ তথাগতবাবু টুইটারে লেখেন, “দল দালালদের জন্য কোল পেতে দিয়েছিল। গলবস্ত্র হয়ে তাদের এনেছিল। যারা আদর্শের জন্য বিজেপি করত তাদের বলা হয়েছিল, এতবছর ধরে কি করেছেন, ছিঁ..ছেন ? আমরা আঠারোটা সিট এনেছি। জুলিয়াস সিজারের মতো ভিনি ভিদি ভিসি। এখন ভাঁড়ামো করলে হবে? আজকে বিজেপির শোচনীয় পরিণতি এই সবের জন্যই।“
সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তথাগতবাবু ফেসফুকে লেখেন, “ইগোর চাইতেও অনেক, অনেক বড় টাকা ও নারী। উপনির্বাচনে সমূহে ভরাডুবির সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে খবর আসতে আরম্ভ করেছে। খবর যেমন চাঞ্চল্যকর তেমনি ভয়াবহ, তেমনি নৈরাশ্যজনক। যাচাই করতে একটু সময় লাগবে। ইতিমধ্যে আরো খবর আসবে।“ ১ ঘন্টা বাদে, সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় সেটিতে লাইক, মন্তব্য ও শেয়ার সয় যথাক্রমে ৩৯৩, ৪৮ ও ১৫।
সাড়ে চারটায় হিন্দু সেবাদলের রাজ্য সভাপতি দিবাকর দেবনাথ রাজ্য বিজেপি, দিলীপ ঘোষ ও তথাগত রায়কে ট্যাগ করে টুইটে লেখেন, “কিছু নেতার কাছে দলের থেকে বড় ব্যক্তিগত ইগো। দল বিপুল ভোটে হারছে হারুক কিন্তু আমাদের ইগো সবার ঊর্ধ্বে। এভাবেই যদি চলতে থাকে তবে শুধু নেতা, নেতাদের ইগো আর কিছু চাটুকারিতা করা লোক থাকবে। কর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষ থাকবে না।“
সাড়ে পাঁচটায় জবাবে টুইটারে তথাগতবাবু লেখেন, “বিজেপির এক বহু পুরোনো কর্মী স্বপন দাশের মন্তব্য: নির্বাচনের ঠিক আগে জয়নগরে সভা পরিচালনা করছিলাম, আগের দিন অভিনেত্রী শ্রাবন্তী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, কৈলাশজী তাঁর ভাষনে শুধু শ্রাবন্তীর নাম….শুধু শ্রাবন্তী বন্দনায় মগ্ন ছিলেন যেন লালা ঝরছে। লজ্জা করছিল আমার, এরা আমাদের নেতা?”
এর পর ছ’টা নাগাদ তথাগতবাবু ফেসফুকে এটি আপলোড করেন। আধ ঘন্টা বাদে, সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় সেটিতে লাইক, মন্তব্য ও শেয়ার হয় যথাক্রমে ৪২২, ৬৮ ও ১৫। জমে ওঠে বিতর্ক। পক্ষে-বিপক্ষে অংশ নেন নেটানাগরিকদের অনেকে।
বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই বাংলার বিজেপিতে শুরু হয়েছে ভাঙন। শুধু দলত্যাগই নয়, উপনির্বাচনে একের পর এক হাতছাড়া হয়েছে বিধানসভা নির্বাচনে জেতা আসন। শান্তিপুর বাদে বাকি তিনটি আসন অর্থাৎ খড়দহ, দিনহাটা ও গোসাবার বিজেপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই টানাপোড়েনের মাঝে সামাজিক মাধ্যমে ফের দলের নেতাদের তুলোধোনা করলেন তথাগত রায়।