আমাদের ভারত, বালুরঘাট, ১১ মার্চ: নার্সিং হোমের কায়দায় কর্মীদের তোলাবাজি করার অভিযোগ বালুরঘাট সরকারি হাসপাতালে। মরণাপন্ন আদিবাসী রোগীর কাছে ছয়শো টাকা দাবি কর্মীদের। ভিডিও ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। টাকা দিতে না চাওয়ায় চিকিৎসা না করানোর হুমকি সরকারি হাসপাতাল কর্মীদের। মঙ্গলবার রাতে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। ঘটনার ভিডিও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়েছে জেলাজুড়ে। সরকারি হাসপাতালের এমন ঘটনায় নিন্দায় সরব হয়েছেন সকলেই।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, অসুস্থ ওই রোগীর নাম চান্দু মার্ডি। বালুরঘাটের অমৃতখন্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের রিস্তারা এলাকার বাসিন্দা সে। মঙ্গলবার রাতে সাংসারিক অভাব অনটন ও অশান্তির জেরে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হবার চেষ্টা করে পেশায় কৃষক চান্দু। হোলির রাতে নির্জন ওই এলাকা থেকে বিষ খেয়ে নেওয়া ওই অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে চরম সমস্যায় পড়েন তার বাড়ির লোকেরা। ফাঁকা রাস্তায় অসুস্থ ও দুঃস্থ আদিবাসী পরিবারকে দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন পথ চলতি এক যুবক। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তার গায়ে হাত দিতে চায়না কর্তব্যরত কর্মীরা বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, অসুস্থ ওই রোগীর গায়ে হাত দিতে একশো টাকা লাগবে বলেও দাবি করে কর্মীরা বলে অভিযোগ। যে টাকা দিতেই বিষ খাওয়া ওই রোগীকে পরিস্কারের জন্য ছয়শো টাকা দাবি করে হাসপাতালের পুরুষ মেডিকেল বিভাগের কর্মীরা। যে ঘটনার প্রতিবাদ জানান অসুস্থ ওই আদিবাসী ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া পথচলতি ওই যুবক। টাকা চাইবার ঘটনার ভিডিও মোবাইল বন্দি করতেই কেড়ে নেওয়া হয় তার ফোন, গলা ধাক্কা দিয়ে হাসপাতাল থেকে ওই যুবককে বের করে দেবারও অভিযোগ উঠেছে কর্মীদের বিরুদ্ধে। ওইদিন রাতে সরকারি হাসপাতালের এমন ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো আলোড়ন পড়েছে। ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
অসুস্থ ওই রোগীর সাহায্যে এগিয়ে আসা যুবক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, অসহায় পরিবারটিকে সাহায্য করতেই হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি। প্রথমে একশো টাকা দাবি করলে নিজের পকেট থেকেই তা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও ফের ছয়শো টাকার দাবি জানায়। অসহায় গরীব মানুষরা যাবে কোথায়? সরকারি হাসপাতালে কেন তাদের টাকা দিতে হবে? তারই প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি।
কনক বর্মন নামে এক রোগীর আত্মীয় বলেন, সরকারি হাসপাতালের নামে তোলাবাজি চলছে। গরীব মানুষদের চিকিৎসার জায়গা নেই।
প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা জানিয়েছেন, অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। সরকার গরীব মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন, আর কিছু মানুষ এসব করে সরকারের বদনাম করবার চেষ্টা করছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সাথে কথা বলবেন এবং যারা এঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবার দাবি জানাবেন।
সাংসদ সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার নামে তোলাবাজি চলছে। কিছু দাদাদের মদতে দালালে ভরে গেছে হাসপাতাল। আর যার খেসারত গুনছেন সাধারণ ওই আদিবাসী মানুষেরা।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে কোন টাকা লাগে না। বিষয়টি নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ পাননি।