সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১ নভেম্বর: গ্যাস সিলিন্ডার লিক করে অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ কলকাতা পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর, তার শ্বশুর ও শাশুড়ি। গতকাল রাতে ঘটনাটি ঘটে বিষ্ণুপুর পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আকুঞ্জিপাড়ায়।গুরুতর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে ভর্তি করা হয় বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
উল্লেখ্য, ওই পরিবারের কর্তা জগন্নাথ পাল ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। একই বাড়িতে থাকেন তার মৃত দাদার স্ত্রী সবিতা পাল এবং জামাই সঞ্জয় কুণ্ডু, যিনি কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে সবিতা দেবী রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পুরনো গ্যাস সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি নতুন সিলিন্ডার লাগাতে যান। কিন্তু সিলিন্ডারটি সঠিকভাবে সংযোগ না হওয়ায় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস বাইরে বেরিয়ে আসে। সেই সময় তাকে সাহায্য করতে রান্নাঘরে যান তাঁর দেবর জগন্নাথ পাল ও জামাই সঞ্জয় কুণ্ডু। তারা কোনওভাবে সিলিন্ডার ও ওভেনের সংযোগ স্থাপন করলেও বুঝতে পারেননি যে গোটা ঘর গ্যাসে ভরে গিয়েছে। গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি কেউ বুঝে ওঠার আগেই ওভেনে আগুন ধরাতে লাইটার ব্যবহার করা হয়, আর সেই মুহূর্তেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে গোটা রান্নাঘর। আগুনে পুড়ে যায় ঘরের দরজা-জানালা, ফ্রিজ, আসবাব, এমনকি রান্নার সমস্ত সরঞ্জাম। আগুনে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন রান্নাঘরে থাকা সবিতা পাল, জগন্নাথ পাল ও সঞ্জয় কুণ্ডু। তাদের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। খবর দেওয়া হয় বিষ্ণুপুর দমকল বিভাগে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গুরুতর অবস্থায় দগ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে দ্রুত বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আহতদের দেহের প্রায় ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তিনজনেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রাতেই আহতদের দেখতে হাসপাতালে পৌঁছান বিষ্ণুপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, স্থানীয় বিধায়ক এবং কাউন্সিলর। তাঁরা আহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন। চেয়ারম্যান বলেন, “এই দুর্ঘটনায় আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা সম্ভব, সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অগ্নিকাণ্ডে ঘরের একটি বড় অংশ সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। পরে পুলিশ গিয়েও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। প্রাথমিকভাবে অনুমান, সিলিন্ডার লিক হয়ে গ্যাস জমে যাওয়ায় এই ভয়াবহ আগুন লাগার কারণ।
পুরো এলাকাজুড়ে এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে সবাই ছুটে আসি। দেখি গোটা রান্নাঘর আগুনে জ্বলছে। তিনজন ভেতরে আটকে ছিলেন। আমরা কোনওভাবে দরজা ভেঙ্গে তাঁদের বাইরে বের করি।”

