আমাদের ভারত, ২২ আগস্ট: “পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন শরৎচন্দ্র। বার্মায় থাকতেন শ্রমিকদের পাড়ায়। কিন্তু মানুষের মন জয় করেছিলেন। তাঁর লেখনী হয়ে উঠেছে চিরকালীন।” শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতর অধীন ‘শরৎ স্মৃতি সমিতি’-র এক আলোচনাচক্রে সভামুখ্য হিসাবে এই মন্তব্য করেন সমিতির সভাপতি ডঃ রামকুমার মুখোপাধ্যায়।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মের আসন্ন দেড়শ বছর উপলক্ষে শুক্রবার অশ্বিনী দত্ত রোডে কথাশিল্পীর স্মৃতিবিজড়িত ওই ভবনে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়। তাতে উদ্বোধনী অধিবেশনে সূচক ভাষণ দেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানন্দ মহারাজ। তিনি বলেন, “পাঠকদের মন জয়ে শরৎচন্দ্রের এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি তাঁর মানবভাবনা। তাঁর নিজস্ব সত্ত্বা।”
এই প্রসঙ্গে স্বামী অখণ্ডানন্দজীর প্রসঙ্গ তোলেন মহারাজ। বলেন, “শরৎচন্দ্র একেবারেই ধর্মপ্রাণ ছিলেন না। কিন্তু একদিন অখণ্ডানন্দজীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। স্বামীজী বিস্মিত হয়ে তাঁর কাছে আসার কারণ জানতে চাইলেন শরৎচন্দ্রর কাছে। শরৎচন্দ্র জবাবে বলেন, “আপনি তো মানুর কথা ভাবেন। মানুষের জন্য কাজ করেন। আমিও তাই। সে কারণেই এসেছি আপনার কাছে।”
রামকুমারবাবু বলেন, সময়ের দাবি সর্বকালীন। লেখক চলে যাওয়ার বহু পরেও তাঁর সৃষ্টি, তাঁর লেখার বিশ্লেষণ হতে থাকে। যে কারণে শেক্সপিয়রের ওপর ৩৭ হাজার বই বার হয়েছে।
সমিতির ইতিহাসের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, শরৎচন্দ্রের প্রয়াণের পর তাঁর স্মৃতি জাগরুক করে রাখার কাজে প্রথম যে তিনজন উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাঁরা হলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ১৯৪৩ সালে স্বীকৃতি পায় এই প্রতিষ্ঠান। এর পর নানা বাধা অতিক্রম করে কিভাবে বিকশিত হয়েছে সমিতির কর্মকাণ্ড, তা বর্ণনা করে শরৎচন্দ্রের উত্তরাধিকারী হিসাবে দায়িত্ব পালনের বার্তা দেন তিনি।
শরৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার বসু অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে বলেন, “এই যে ঘরে আজ আলোচনা লচ্ছে, একসময় সেটি ছিল শরৎচন্দ্রের বৈঠকখানা। কত বিখ্যাত মানুষজন এখানে এসেছেন। প্রতি শুক্রবার এখানে আমরা সাহিত্য-চর্চা করি। ধন্যবাদ জানান শরৎ সমিতির সহ-সম্পাদক সুভাষ জানা।
এর পর এক ঘন্টার আলোচনায় প্রথম অধিবেশনে পৌরোহিত্য করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশিষ্ট অধ্যাপিকা, শরৎ-গবেষিকা ও লেখিকা ডঃ কুমকুম চট্টোপাধ্যায়। অধিবেশনে শরৎচন্দ্রের সমাজভাবনা ও অর্থনীতি সম্পর্কে বলেন যথাক্রমে প্রবীন শিক্ষাবিদ, গবেষক ডঃ বাসবী চক্রবর্তী ও সাংবাদিক অশোক সেনগুপ্ত।
এদিন পরের অধিবেশনে আলোচনার বিষয় ছিল শরৎ সাহিত্যে ভারত ও ভারতীয় সাহিত্যে শরৎচন্দ্র। তাতে সভামুখ্য ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক ডঃ ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়। এই আলোচনায় আমন্ত্রিত ছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঋতম মুখোপাধ্যায় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মৃন্ময় প্রামাণিক।
এদিন আলোচনায় তৃতীয় অধিবেশনে আলোচনার বিষয় ছিল ‘শরৎসাহিত্যে নারী। এর সভামুখ্য ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং নৈহাটির বঙ্কিম চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রাক্তন অধ্যক্ষ পিনাকেশ সরকার। আলোচনায় ছিলেনন বাণীপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বিদিশা ঘোষদস্তিদার ও কথাসাহিত্যিক ও সমাজকর্মী আয়েষা খাতুন।
অনুষ্ঠানশেষে ধন্যবাদ জানান কলকাতা এবং বোম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের প্রথম চেয়ারপারসন, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং সমিতির পৃষ্ঠপোষক চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের সঙ্গে শরৎচন্দ্রের পরিবারের সখ্যতা এবং পথের দাবির পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণে মুখোপাধ্যায় পরিবারের সক্রিয়তার কথা বলেন।