জে মাহাতো, আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ১৮ ডিসেম্বর: ২২ বছর ধরে শেকলবন্দি থাকার পর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মুক্তি পেল মেদিনীপুরের কালগাঙ্গের যুবক শাহজাহান মোল্লা। কেটে গেল শিকল আবদ্ধ জীবন।
জানা যায়, পেশায় রিকশা চালক বাবুয়া মোল্লা ও মর্জিনা বিবির তিনটি সন্তান। দুই মেয়ে, এক ছেলে। শাহাজান মোল্লাই বড়। একসময় বাবা রিক্সা চালিয়ে কোনওক্রমে সংসার চালাতেন, কিন্তু বয়সের ভারে এখন আর রিকশা চালাতে পারেন না। কাজেই, সংসারে আর কেউ রোজগেরে নেই, নিত্যদিন অভাব লেগে রয়েছে, নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ছোটবেলায় এক দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কে আঘাত লাগে শাহাজানের। তারপর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা আরও জটিল হতে থাকে। যেখানে-সেখানে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। কোনও উপায় না থাকায় ছেলেকে আটকে রাখতে বাধ্য হন শাহাজানের অসহায় বাবা-মা। বিগত ২২ বছর ধরে তাকে শেকল দিয়ে হাত পা বেঁধে দরজার সঙ্গে আটকে রাখা হয়। শাহজাহানের এই করুন পরিস্থিতির কথা জানতে পেরে তাকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে উদ্যোগী হন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। শাহজাহানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য ব্লক ওয়েলফেয়ার অফিসার চন্দন রজকের নেতৃত্বে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাঠানো হয় মেডিকেল টিম।
অতিরিক্ত জেলা শাসক কেম্পা হ্যাঁনিয়া বলেন, ওই যুবক একেবারে অসুস্থ নয় বলে মেডিকেল টিমের সদস্যরা জানিয়েছেন। বাড়িতেই তার চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলা যাবে। খাদ্য দপ্তরের মাধ্যমে তার বিশেষ রেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই সে কথা বলতে পারে না। ছোটবেলায় মায়ের কোল থেকে পড়ে গিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারায়। তারপর এদিক ওদিক পালিয়ে যেতে থাকে। এজন্য সকালবেলা বাবা-মা কাজে বের হওয়ার সময় তাকে দরজার সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে রেখে বের হতো। সন্ধ্যাবেলা কাজ থেকে ফিরে রাতে শোয়ার সময় শিকল খুলে দিত। প্রতিবন্ধী দপ্তর ষাট শতাংশ প্রতিবন্ধী ঘোষণা করলেও শাজাহান এতদিন সরকারি সুবিধা কিছু পায়নি। জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগে খুশি তার বাবা-মা।