সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ৪ ফেব্রুয়ারি: ঠিক যেন ছিল বিড়াল, হয়ে গেল রুমাল। এলাকায় সবাই জানত দুঁদে পুলিশ অফিসার হিসাবে। তার বদমেজাজি আচরণ আর দাপটে তটস্থ সকলেই।
কিন্তু আচমকাই জানা গেল, পুলিশ অফিসার তো দূর, আসলে তিনি বড় মাপের জালিয়াত! এলাকায় নীলবাতিওয়ালা গাড়ি নিয়ে রীতিমতো দাপটের সঙ্গে ঘুরতেন। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের কাছে বেশ কিছু দিন ধরেই খবরটা আসছিল। এক মহিলা নিজেকে শীর্ষ গোয়েন্দাকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে নানা রকমের কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তারপরই পুলিশের জালে ধরা পড়লেন ওই মহিলা অচিরা যাদব।
সত্যব্রত বসু রায় বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা এক যুবক অভিযোগ করেন, ওই মহিলা তাঁকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। ওই যুবকের চাকরিও তো হয়ইনি, উল্টে টাকা ফেরত চাইলে মহিলা তাঁকে হুমকি দিয়েছেন।
তদন্তকারী আধিকারিক দাবি,”আমরা মহিলার দাবি খতিয়ে দেখছি। তাঁর স্বামী শুল্ক দফতরে কাজ করতেন।” সেই সূত্রেই তাঁর কলকাতা বন্দর এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত বেশ কিছু আমলার সঙ্গে আলাপ-পরিচয় ছিল বলে জানা গিয়েছে। বাবাও ছিলেন ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসে। সেই পরিচয় কাজে লাগিয়েই তিনি নিজেকে ‘ইনটেলিজেন্স ব্যুরো’র আইজি পদমর্যাদার আধিকারিক বলে পরিচয় দিতেন। তাঁর কাছ থেকে একটি ভুয়ো পরিচয়পত্রও পেয়েছে পুলিশ। নিজেকে শীর্ষ পুলিশকর্তা পরিচয় দিয়ে অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়ে প্রতারণা করেছেন অচিরা। কিন্তু, কেন তিনি এরকম প্রতারণার কাজ শুরু করলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তদন্তে নেমে সোমবার রাতে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এবং পূর্ব যাদবপুর থানা মহিলাকে আটক করে জেরা শুরু করে। জানা যায়, তিনি কোনও ভাবেই সরকারি চাকুরে নন। বছর সাতচল্লিশের ওই মহিলার স্বামী মহাবীরপ্রসাদ যাদব ছিলেন কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতর (কাস্টমস)-এর পদস্থ কর্তা। ২০১৭ সালে তিনি মারা যান। জেরায় তিনি দাবি করেছেন, তাঁর বাবা সুবোধচন্দ্র চৌধুরী ছিলেন অরুণাচল প্রদেশের প্রাক্তন বনকর্তা। স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত তাঁর পড়াশোনা তিনসুকিয়াতে। স্নাতোকত্তর পর্যায়ের লেখাপড়া গুয়াহাটিতে। ‘গ্লোবাল টেররিজম’ বা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস নিয়ে তিনি গবেষণাও করেন। তাঁর দাবি, তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি-ও করেছেন।