মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্যেই অভিনব কায়দায় দলত্যাগ রায়গঞ্জের বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের চার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের

স্বরূপ দত্ত, আমাদের ভারত, উত্তর দিনাজপুর, ১২ জুন:
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের মাঝেই বিপাকে শাসক শিবির। এদিন অভিনব কায়দায় দলত্যাগ করলেন রায়গঞ্জ ব্লকের ৪নং বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের চার জন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে সমস্তরকম সম্পর্ক ত্যাগের ঘোষণার পাশাপাশি তাদের কাছে থাকা দলের সমস্ত ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন তারা ডাকযোগে দলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের কাছে পাঠিয়ে দেয়। তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করলেও তারা অন্য রাজনৈতিক দলে যোগদান করছেন না বলে জানিয়েছেন। তবে ওই পঞ্চায়েতে নির্দল হিসেবে নির্বাচনে লড়াই করার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালা অবশ্য তাদের দলে থেকে যাবার ব্যাপারে বোঝানো হবে বলে জানিয়েছেন।

জানা গিয়েছে, বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ৭টিতে জেতে। পরবর্তীতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা মনসুর আলীর উদ্যোগে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করে। মনসুর আলীর স্ত্রী লায়লা খাতুন ওই পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়। তার বছরখানেক পর তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ তছরুপ করার অভিযোগ ওঠার পর দলীয় সিদ্ধান্তে তাকে ওই প্রধান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই দলীয় নেতৃত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রধান ও তার কয়েকজন অনুগামী সদস্যের দূরত্ব বাড়তে থাকে বলে দলীয়সূত্রে জানা গিয়েছে।

এদিন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান চারজন সদস্য লায়লা খাতুন, মলয় সরকার, রুপো জালি ও উৎপলা বর্মন প্রচুর সংখ্যক দলীয় কর্মী সমর্থক নিয়ে রায়গঞ্জের মুখ্য ডাকঘরে এসে তাদের কাছে থাকা দলীয় পতাকা, ফেস্টুন খামে ভরে উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়ালার ঠিকানায় পাঠায়। তাদের দাবি, একনিষ্ঠ দলীয় কর্মী ও সদস্য হওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছুদিন ধরে দলীয় নেতৃত্ব তাদের প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছে না। এলাকার কোনও উন্নয়নমূলক কাজে তাদের সিদ্ধান্তের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। পঞ্চায়েতে একাধিক দূর্নীতি নিয়ে তারা দলীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানালেও তা আমল দেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদেই তারা এদিন দলের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন।

দলত্যাগী এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মনসুর আলী জানিয়েছেন, “পাড়ায়, গ্রামে, চায়ের দোকানে তাদের প্রতিনিয়ত “চোর” বলে সম্বোধন করা হয়। নেতৃত্বকে বারবার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এলাকার দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের প্রশ্রয় দেবার জন্য দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভেই আমরা এদিন দলত্যাগ করেছি। তবে দলের প্রতীক ও পতাকার প্রতি আমাদের সন্মান রয়েছে। এগুলো যত্রতত্র পড়ে থাকার থেকে ফ্ল্যাগ, ফেস্টুনগুলির যাতে অবমাননা না হয়, সেই কারণেই আমরা সেগুলো ডাকযোগে এদিন জেলা সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করলেও আমরা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান করছি না। তবে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে আমরা নির্দল হিসেবে নির্বাচনে লড়াই করতে পারি।”

অপরদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালা জানিয়েছেন, “ছোটখাটো মানঅভিমান থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া যায়। আমি তাদের দলত্যাগ না করারই কথা বলবো। তবে দলীয় পতাকার অবমাননা না হওয়ার জন্য তারা যে সেগুলি ফেরত পাঠিয়েছে, এটা প্রশংসার। “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *