প্রদীপ দাস, আমাদের ভারত,২২ আগস্ট: দিলীপ ঘোষ’কে সভাপতির পদ থেকে সরানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। বিজাপির অন্দরে অনেক জল্পনা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং সংঘ পরিবারের সিদ্ধান্ত দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বেই ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে লড়বে বিজেপি। কারণ দিলীপ ঘোষ পয়মন্ত, তিনি দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোতেই তিনি সাফল্য দেখিয়েছেন, তাই দিলীপ ঘোষের উপরেই আস্থা রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং আরএসএস।
বিভিন্ন সময়ে জল্পনা হয়েছে এবং সেই জল্পনা এখনো চলছে, দিলীপ ঘোষকে নাকি সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। সম্প্রতি দলের মধ্যে এমন জল্পনাও উঠেছিল যে দিলীপ ঘোষকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করে অন্য কাউকে সভাপতি করা হবে এবং তাঁর নেতৃত্বেই বিজেপি ২০২১ এর নির্বাচনে লড়বে। শুধু এখনই নয়, এই জল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই দলের মধ্যে চলছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং সংঘ পরিবারের রাজ্য নেতাদের কাছে দিলীপ ঘোষের বিকল্প আপাতত কেউ নেই। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচন দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বেই হবে। কারণ দিলীপ ঘোষের কৃতিত্বকে তারা ছোট করে দেখছেন না। তারওপর দিলীপ ঘোষ হচ্ছেন পয়মন্ত।
তবে, অনেক সমালোচকই বলছেন, দিলীপ ঘোষের সাফল্য হিসাবে যেটা বলা হচ্ছে সেটা তাঁর নিজস্ব নয়, সেটা মোদী হাওয়া। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আবার অন্যএকটা মহল অতীতের প্রসঙ্গ তুলে ধরছেন। তাঁরা বলছেন, ১৯৮৯ সাল থেকে রাম মন্দির আন্দোলনে সারাদেশে জোয়ার এসেছিল। পশ্চিমবঙ্গও তার বাইরে ছিল না। কিন্তু তখন বিজেপির দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তারা সেই হাওয়াকে কাজে লাগাতে পারেননি। কিন্তু দিলীপ ঘোষ দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদী হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে দুজনকে সাংসদ হিসাবে জিতিয়ে এনেছিলেন। এরপর বিধানসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষের সাফল্য নজর কেড়েছিল। রাজনীতিতে এসেই বিধানসভা নির্বাচনে তিনি নিজে জিতেছিলেন শুধু তাই নয়, আরও ২জনকে জিতিয়ে ছিলেন। এর পরেই অভাবনীয় সাফল্য গত লোকসভা নির্বাচনে। রাজ্য থেকে এই প্রথম ১৮ জন সাংসদ হিসবে জয়ী হয়েছেন, যা ছিল অনেকেরই কল্পনার বাইরে।
দিলীপ ঘোষ গত লোকসভা নির্বাচনের স্লোগান তুলেছিলেন ১৯–হাফ, একুশে সাফ। এই শ্লোগানের প্রথম অংশকে দিলীপ ঘোষ নিজেই কার্যকর করে দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দিলীপ ঘোষ দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে বিজেপির সংগঠন বলতে তেমন কিছু ছিল না। বিভিন্ন জেলায় যে সংগঠন ছিল তা খুবই দুর্বল ছিল। কিন্তু দিলীপ ঘোষের কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেই সংগঠন আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। জেলার কার্যকর্তারাও ধীরে ধীরে মাঠে নেমে পড়েছিলেন। পাশাপাশি, একের পর এক জনসভা এবং ভোকাল টনিকের মাধ্যমে তিনি কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। শুধু তাই নয় রাজ্যের মানুষের একটা অংশের মন জয় করে নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে আজ বিজেপি রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিলীপ ঘোষকে কোনোভাবেই সরানোর চিন্তা করছে না, কারণ দিলীপ ঘোষ তাদের কাছে পয়মন্ত। তাঁর নেতৃত্বেই একসময়ের লালমাটির বাংলায় পদ্ম ফুটেছে। এই সাফল্য অভাবনীয়! এটাকে তারা কোনওভাবেই ছোট করে দেখছেন না। আর দিলীপ ঘোষ নিজেও সেটা জানেন, তাই তিনি অনেকবার বলেছে ২০২১ পর্যন্ত তিনি থাকছেন।
দিলীপ ঘোষের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের বক্তব্য রাজ্যে বিতর্ক তৈরি করেছে, কিন্তু দিলীপ ঘোষ থামেননি। যুক্তি হিসাবে তিনি অনেকবার বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে যেমন পরিস্থিতি চলছে তাতে এই ভাবে চলা ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। দিলীপ ঘোষ আক্রমণকারী সঙ্গে যেমন লড়তে জানে ঠিক সেইভাবে ভালো মানুষের সঙ্গেও তেমন ব্যবহার করতে পারে। আপাতত পশ্চিমবঙ্গে এই ভাবেই চলতে হবে।” তাঁর অনেক বক্তব্য নিয়ে শিক্ষিতমহলে সমালোচনা হয়েছে। যেমন,গরুর দুধে সোনা। শিক্ষিতমহল তাঁর এই বক্তব্যের পরেই গরুর দুধে সোনা খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু গ্রামের সাধারণ মানুষ সে পথে হাঁটেনি। তারা জানে গরুর দুধের গুরুত্ব কতটা। তাই তারা শিক্ষিতদের মত দুধের মধ্যে সোনা খোঁজেনি। দিলীপ ঘোষের বক্তব্যকে মেনে নিয়ে তারা গরুর দুধ খেয়ে মনে করছে সোনা পেল। ফলে গ্রাম বাংলাতেও দিলীপ ঘোষের একটা জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। তাই দিলীপ ঘোষ শুধু ২০২১এর নির্বাচনের কান্ডারী নন, তিনি দলের মুখ্যমন্ত্রীর অঘোষিত মুখ। সংঘের খুব ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানাগে, এর মধ্যেও বিজেপি, বিশেষ করে আরএসএস যদি তেমন কোনো মুখ খুঁজে না পায়, তাহলে নির্বাচনে জিতলে দিলীপ ঘোষ হবেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রথম মুখ্যমন্ত্রী।