সাথী দাস, পুরুলিয়া, ২০ ফেব্রুয়ারি: শবর যুবককে মারধর ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় প্রাক্তন বরাবাজার থানার ওসির ৮ বছরের কারাদণ্ড দিল পুরুলিয়া জেলা আদালত।
১৯৯৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি ১টি চুরির ঘটনার সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে তৎকালীন কেন্দা থানার অধীনে অকরবাইদ গ্রামের বাসিন্দা বুধু ওরফে বুধন শবর নামে যুবককে(২৯) আটক করে বরাবাজার থানার পুলিশ। ১২ তারিখ সকাল পর্যন্ত থানার লকআপে রাখা হয়। ১২ তারিখ তাকে পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ১৬ তারিখ পুনরায় আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। ১৭ তারিখ পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগারের এসে তাঁর স্ত্রী শ্যামলী শবর জানতে পারেন বুধন শবরের ঝুলন্ত অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার হয়। জেল কর্তৃপক্ষ জানায় বুধন আত্মহত্যা করেছে।

পুলিশ ময়না তদন্ত করলেও পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া-শবর সমিতির উদ্যোগে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তের জন্য দেহ গ্রামে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। সেই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ শবর-খেড়িয়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি মহাশ্বেতা দেবী হাইকোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে একটি চিঠি দেন। পাশাপাশি ১৯ তারিখ মৃত বুধন শবরের স্ত্রী শ্যামলী শবর পুরুলিয়া জেলা আদলতের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কোর্ট কমপ্লেন করেন। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রুমা পালের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত হয় ও অ্যাডভোকেট প্রদীপ রায়কে আদালত বান্ধব নিয়োগ করেন। পরে এই ঘটনার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেন। তৎকালীন বাম সরকার এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রধান বিচারপতির এজলাসে আবেদন করে। প্রধান বিচারপতি সেই আবেদন খারিজ করে দেন।
তদন্ত শুরু করে ২২/৯/২০০৩ সালে চার্জ ফ্রেম করে। ভারতীয় দণ্ড বিধির ১২০ বি ৩৪৮/ ৩৩০/ ৩০৬/ ৪৬৫/ ৪৭১/ ২০১ ধারায়। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ তৎকালীন বরাবাজার থানার ওসি অশোক রায় ও তৎকালীন অফিসার এএসআই অজয় সেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিবিআই। এই মামলায় মোট ৮৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তাতে বরাবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য কর্মী যেমন ছিল তেমনি পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগারের বেশ কয়েকজন আধিকারিক সহ জেল কর্মী ও পুলিশও ছিল। গত শুক্রবার পুরুলিয়া জেলা আদালতের ফার্স্ট ট্রাকের ২ আদালত তৎকালীন বরাবাজার থানার ওসি অশোক রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেন, প্রমাণের অভাবে অন্য পুলিশ অফিসার অজয় সেনকে বেকসুর খালাস করেন। আজ প্রাক্তন বরাবাজার থানার ওসি অশোক রায়ের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করেন। ৩০৬ ও ৩৩০ আইপিসি ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ৩০৬ ধারায় ৮ বছর কারাদণ্ড ও ৩৩০ ধারায় ৫ বছর কারাদণ্ড দেন। এছাড়াও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে জানান অভিযোগকারীদের আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ সিংহ দেও।
আদালতের এই রায়ে সন্তুষ্ট পশ্চিমবঙ্গ শবর ও খেড়িয়া কল্যাণ সমিতির ডিরেক্টর প্রশান্ত রক্ষিত। তিনি বলেন, “সব পুলিশ খারাপ নয়। তাঁদের সহযোগিতার জন্য আজ বুধন শবরের আত্মা শান্তি পেল।”
নিহত বুধন শবরের স্ত্রী শ্যামলী শবর বলেন, “২৫ বছর ১০ দিন পর বিচার পেলাম। আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ।”

