কুমারেশ রায়, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ নভেম্বর: ধর্ম জাত পাত বড় কথা নয়, জাতপাতের ঊর্ধ্বে মানুষের বড় পরিচয় তার মানসিকতা। ধর্ম কোনও বাধা হতে পারে না। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে এমনই সম্প্রীতির নজির স্থাপন করে চলেছেন ৬১ বছর বয়সের ইসমাইল চিত্রকার। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার নাড়াজোল গ্রামে। অভাবের সংসার তাঁর। পরিবারে স্বামী স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে পাঁচ মেয়ে।
আগে পটশিল্পের সাথে যুক্ত থাকলেও বরাবর, হিন্দু দেব দেবীর প্রতিমা গড়ে সংসার চালিয়ে আসছেন তিনি।
বর্তমানে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ সহ কালী প্রতিমা তৈরি করে পরিবার নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন ইসমাইলবাবু। তার সাথে হাত লাগান স্ত্রী আয়রন বিবি সহ মেয়ে হাসিনা ও আসপিয়ারা। অভাবের সংসারে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর সামর্থ্য হয়নি। তাই বাবার সাথে মেয়েরাও প্রতিমা তৈরির কাজে সহায়তা করেন। আর এই কাজ করে তারা পান মানসিক তৃপ্তি।
ইসমাইলবাবু আগে পটশিল্পী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পটের তৈরি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। কিন্তু বর্তমানে প্রতিমা তৈরিকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। ইসমাইলবাবু মূলত ডায়াসের তৈরি বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করেন। মাটি কিনে তা ছাঁচের তৈরি করে তার উপর সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ডায়াসের প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করেন।তাঁর তৈরি প্রতিমার চাহিদাও তুঙ্গে। শুধু দাসপুর নয়, ঘাটাল, পাঁশকুড়া, কেশপুর সহ দূরদূরান্তে তাঁর তৈরি দেবদেবীর মূর্তি বিক্রির জন্য যায়। ভিন ধর্মের হলেও ইসমাইল বাবুর হাতের তৈরি প্রতিমা কিনতে বা পুজোয় কোনও অনীহা নেই কারও।
সামনেই কালী পুজো, তার আগে ইসমাইলবাুর বাড়িতে ব্যস্ততা তুঙ্গে। ইতিমধ্যে খরিদ্দাররা আসতে শুরু করেছে প্রতিমার অর্ডার দিতে। কম দামে ডায়াসের তৈরি প্রতিমা পেতে কালী পুজোর আগে রীতিমতো ভিড় জমে যায় নাড়াজোলে ইসমাইল চিত্রকারের বাড়িতে। এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন বিরল। এতে এলাকার সবধর্মের মানুষ খুশি এমনটাই জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।তাদের দাবি, এলাকায় সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে। এখানে কোনও জাতপাতের বিচার কেউ করে না। তাই ইসমাইল চিত্রকার ইসলাম ধর্মের হলেও তার তৈরি প্রতিমা কিনতে কোনও দ্বিধা বোধ করে না হিন্দু ধর্মের মানুষজন। সকলেই সাদরে ইসমাইলবাবুর তৈরি কালী প্রতিমা কিনে নিয়ে গিয়ে পুজো করেন।কালী পুজোর আর কয়েকটা দিন বাকি ইসমাইলবাবু সহ তার পরিবারের সদস্যদের এখন চরম ব্যস্ততা। কালী প্রতিমা সময়ে প্রস্তুত করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নাওয়া খাওয়া ভুলে পুজোর আগে জোরকদমে চলছে কালী প্রতিমা তৈরির কাজ। সেই প্রতিমা কিনে নিয়ে গিয়ে পুজোর জন্য ইতিমধ্যে তার বাড়িতে আনাগোনা শুরু হয়েছে ক্রেতাদের।