স্নেহাশীষ মুখার্জি ,আমাদের ভারত, নদীয়া, ১৪ এপ্রিল: এই কঠিন পরিস্থিতিতে ধর্ম ভুলে করোনা মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়কে হিন্দুদের পাশে দাঁড়াতে বললেন বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহম্মদ ইয়াহিয়া। মৃতের ধর্মীয় পরিচয় না দেখেই রাজ্যের মুসলিম সমাজকে এগিয়ে আসতে বললেন ইয়াহিয়া।
বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে মানুষ মারা গেলেও করোনার জেরে দেহ সৎকার বা কবরস্থ করতে গেলে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মুসলিম সমাজকে অনুরোধ করেন, “মৃতের ধর্মপরিচয় না দেখে শবদেহ কাঁধে বহন করে শ্মশান বা কবরস্থানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করুন। এই কঠিন সময় আমাদের এক হতেই হবে।”
তাঁর বক্তব্য, ”মনে রাখবেন মৃত্যু যদি আপনার লেখা না থাকে তাহলে মৃত্যু আপনাকে পাহারা দেবে আর যদি মৃত্যু আপনাদের লেখা থাকে তাহলে জীবন আপনাদের মৃত্যুর কাছে পৌঁছে দেবে।” তাই আতঙ্কিত হবেন না। যে সমস্ত অমুসলিম ভাইরা করোনা ছাড়া মারা যাচ্ছেন তাদের সম্মানপূর্বক শ্মশানে পৌছে দেবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিন। এছাড়া এই মুহূর্তে যারা সবচেয়ে বেশি সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশ বাহিনী এদের পাশে থাকুন, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। তারা করোনায় আক্রান্তের ভয় না পেয়েও জীবন বাজি রেখে আমাদের জন্য ২৪ ঘন্টা ডিউটি করছেন।
প্রচুর জায়গা থেকে খবর আসছে ডাক্তাররা তাদের ভাড়া বাড়ি থেকে বিতাড়িত হচ্ছেন, আক্রান্ত হচ্ছেন, নার্স আক্রান্ত হচ্ছেন, সমাজ তাদেরকে এক ঘরে করে রাখছে, এমনকি দুধ এবং পানীয় জল নেওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি দয়া করে এগুলো করবেন না। তাদের সাথে থাকুন তাদের পাশে দাঁড়ান। কাছাকাছি যেসব ডাক্তার-নার্সরা আছেন তাদেরকে ফোন করে সাহস দিন যে আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের বাড়ির পাশে যে সমস্ত ডাক্তার-নার্সরা ভাড়া বাড়িতে আছেন সেইসব বাড়িওয়ালাদের কাছে আমার অনুরোধ তারা যেন ওঁনাদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করেন। আজকে এই ডাক্তার ,নার্স আছে বলেই আপনারা বেঁচে আছেন। পুলিশ আছে বলেই আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছেন। ভাবুনতো সমাজে যদি ডাক্তার,
নার্স, পুলিশ না থাকতো তাহলে কি হতো?
এই প্রসঙ্গে নাখোদা মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নাসির ইব্রাহিম জানান, করোনা একটা মারণ রোগ। এই রোগ জাতি-ধর্ম দেখে আসে না। মানুষ সচেতন না হলে এই রোগ থেকে নিস্তার নেই। এই বর্তমান পরিস্থিতিতে দয়াকরে ডাক্তার এবং পুলিশদের সহযোগিতা করুন। এদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। নিজের বাঁচার তাগিদে এখন স্বাভাবিক মৃত্যুতেও সৎকারের কাজে মানুষ এগিয়ে আসছেন না। তাই জাতি, ধর্ম না দেখে সৎকারের কাজে মানুষের পাশে দাঁড়ান।
কলকাতার মেয়র পরিষদ স্বাস্থ্য অতীন ঘোষ বলেন, করোনা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। করোনায় মৃতের সৎকার বা কবরস্থের জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা করেছি। এ নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হবেন না। এ বিষয়ে প্রতিটি শ্মশান কবরস্থানে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল গনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিক মৃত্যুতেও মানুষ করোনার ছোঁয়া দেখছেন। মৃত্যুর পর তাদের দেহ সৎকার বা কবরস্থ করতে এলাকার মানুষকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে শ্মশান বা কবরস্থানে ডোম মৃতদেহ ছুঁতে চাইছেন না। তাই স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃতদেহ সৎকারে যাতে কোনো বিঘ্ন না হয় সে কারণে রাজ্যের প্রায় ১৫ হাজার ইমামদের নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে। আর বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনও ধর্ম সম্প্রদায় আপনারা দেখবেন না, করোনা মোকাবিলায় একত্রে আমাদের লড়তে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে।