আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ৩ জুন: ঘূর্ণিঝড় আমফানের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ সুন্দরবনের গোসাবার মানুষকে ত্রাণ সামগ্রী বিলি করতে এলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুরে বাসন্তীর গদখালি ঘাটে এসে পৌঁছন তিনি। সেখানে গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর ও বন দফতরের আধিকারিকরা তাঁকে সম্বর্ধনা জানান। তার পরেই সকলকে নিয়ে দুর্গত এলাকার উদ্দেশ্যে নদীপথে রওনা দেন তিনি।
সপ্তাহ দুয়েক আগে ঘূর্ণিঝড় আমফানের ফলে সুন্দরবনের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের বহু জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষ এখনো ঘরছাড়া। কারণ এখনো পর্যন্ত বহু বাড়ি থেকেই নামেনি জল। বুধবার গোসাবার প্লাবিত এলাকা রাঙাবেলিয়া পরিদর্শনে যান বনমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে দুর্গত প্রায় শ’তিনেক মানুষের হাতে চাল, ডাল, আলু, সোয়াবিন সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন একদিকে তুলে দেন তিনি তেমনি শাড়ি, মশারির মত প্রয়োজনীয় সামগ্রীও তুলে দেন। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও এদিন ছিলেন রাজ্যের মুখ্যবনপাল রবিকান্ত সিনহা, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা সুধীর চন্দ্র দাস সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।
এদিন ত্রাণ বিলি করার পর রাঙাবেলিয়ার বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে দেখেন রাজীব বাবু। কথা বলেন এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে। তাদের অভাব অভিযোগের কথা শুনতে চান তিনি। এলাকার মানুষ দাবি তোলেন কংক্রিটের বাঁধের। সেই উত্তরে মন্ত্রী বলেন,
“আড়াই বছর আগে সেচ দফতরের মন্ত্রী থাকাকালীন সুন্দরবনের বহু জায়গায় কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করেছিলাম। এই রাঙাবেলিয়া এলাকাতেও মাপজোপ হয়ে গিয়েছিল, তবে কি কারণে এখনো এখানে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ হয়নি সেটা ক্ষতিয়ে দেখে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর সাথে কথা বলব”।
অন্যদিকে এদিন ত্রাণ বিলি করতে যাওয়ার পথে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার যে নাইলনের বেড়া ঘূর্ণিঝড় আমফানের ফলে ছিঁড়ে গিয়েছে সেগুলি দেখতে দেখতে যান মন্ত্রী। দ্রুত সেগুলি সারিয়ে ফেলার নির্দেশও দেন বন দফতরের আধিকারিকদের। আধিকারিকরা জানান বনকর্মীরা দিনরাত এক করে এই নাইলনের জাল মেরামতির কাজ করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এরপরে যাওয়ার পথেই বনকর্মীদের নাইলনের বেড়া মেরামতি করতে দেখে কাদার মধ্যেই সেখানে নেমে যান মন্ত্রী। হাত লাগান বনকর্মীদের সাথে। কিছুক্ষণ তাদের সাথে কথা বলে ফের লঞ্চে চেপে রাঙাবেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। এদিন রাঙাবেলিয়া এলাকার ৩০০ ও গোসাবার আর একটি গ্রাম দুমকিতে ৩০০ দুর্গত পরিবারের হাতে বন দফতরের তরফ থেকে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। মন্ত্রী এদিন বলেন,“মানুষের পাশে আমাদের সরকার ছিল, আছে ও থাকবে। আগামীদিনে প্রয়োজনে আরও ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হবে”।
ঘূর্ণিঝড় আমফানে সুন্দরবনের প্রায় ১৬০০ হেক্টর জমির ম্যানগ্রোভ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বন্যপ্রাণের কোনও ক্ষতি হয়নি বলেই দাবি করেছেন বনমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে নজরদারি চালানো হয়েছে। এমনকি ড্রোন ক্যামেরায়ও নজরদারি চালানো হয়েছে, কিন্তু কোথাও বন্যপ্রাণের ক্ষতির বিষয় চোখে পড়েনি। উল্টে, নাইলনের জাল মেরামতির জন্য বনকর্মীরা কাজ করতে গিয়ে বহু জায়গাতেই বাঘ, হরিণ সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণের দেখা পেয়েছেন”।