পানাগড়ে রাসায়নিক দিয়ে কলা পাকানোর প্রক্রিয়াকরন কারখানায় ফুড সেফটির আচমকা হানা

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১৩ আগষ্ট: রাসায়নিক দিয়ে কলা পাকানোর খবর চাউর হতেই এবার নড়েচড়ে বসল ফুড সেফটি দফতর। শুক্রবার পানাগড়ে কলা পাকানোর প্রক্রিয়াকরন কারখানায় আচমকা হানা দিল ফুড সেফটি আধিকারিকরা। অভিযান চালাতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। রসায়নিক প্রয়োগের পরিমানের কোনও রেজিষ্টার নেই, ফল ওঠানামাকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনও নথি নেই বলে অভিযোগ।

  প্রসঙ্গত, গত কয়েকমাস আগে কাঁকসার পানাগড় গ্রাম এলাকায় একটি কলা পাকানোর প্রক্রিকরন কারখানা তৈরী হয়েছে। বিশাল তার গোডাউন। এরাজ্যের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ভিন রাজ্য থেকে নানান মরশুমি ফল আসে। সম্প্রতি কলা পাকানোর কাজ চলছিল। অভিযোগ, ওইসব সব ফলে দ্রুত পাকানো ও নজরকাড়া রং আনার জন্য এক ধরনের রাসায়নিক ব্যাবহার করা হয়। সম্প্রতি বিষয়টি নজরে আসতেই সরব হয় পানাগড় নাগরিক মঞ্চ। স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের অভিযোগ, “রাসায়নিক স্প্রে করে কলা পাকানো হয়। যার ফলে দুদিনের মধ্যে নজরকাড়া রং হয়ে যায়। ভোর হতেই ওইসব ফল প্যাকেট বন্দি হয়ে পানাগড়, বুদবুদ, গলসী, ইলামবাজারের মতো বাজারে চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি হলুদ রংয়ের কলা এখান থেকেই জোগান যাচ্ছে। তাই বিষয়টি প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করুক।”
জানা গেছে, কার্বাইড দিয়ে ফল পাকানোর ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রশ্ন, তাহলে কি ধরনের রাসায়নিক ব্যাবহার হয়? যার ব্যবহারে ৩৫-৪০ ঘন্টায় সবুজ কলা হলুদ রংয় হয়ে পেকে যাচ্ছে।

খবরে প্রকাশ হতেই নড়ে চড়ে বসে কাঁকসা ব্লক প্রশাসন। প্রক্রিকরন ওই কারখানা থেকে পাকানো কলা ও তাতে ব্যবহার করা রাসায়নিকের নমুনা সংগ্রহ করে এবং রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত  কারখানাটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। শুক্রবার ওই কারখানায় আচমকা পশ্চিম বর্ধমান জেলা ফুড সেফটি দফতর হানা দেয়। কারখানার পরিকাঠামো, এধরনের প্রক্রিয়াকরন চালানোর প্রয়োজনীয় ফুড সেফটি ও তার নথি দেখানোর নেটিশ দেয়। প্রক্রিয়াকরনে ব্যবহৃত রসায়নিক ও ফলের নমুনা সংগ্রহ করে। মজুত কতটা ফলে রাসায়নিক কি পরিমানে প্রয়োগ হয় তার প্রয়োজনীয় রেজিষ্টার দেখানোর নির্দেশ দেয় এবং ফল ওঠানামানোকারীদের শারীরিক পরীক্ষার শংসাপত্র দেখানোর নির্দেশ দেয়।

পশ্চিম বর্ধমান জেলা ফুড সেফটি আধিকারিক মনিরাজ পতি জানান, “অভিযোগ পেয়ে ওই কারখানায় গিয়েছিলাম। নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবহৃত রসায়নিক ও পাকা ফলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই নমুনা কোলকাতায় পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। ফুড সেফটির কিছু গাইড লাইন রয়েছে। সেসব নথি তৈরী ও মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কি পরিমান মজুত রাখা হচ্ছে, কি পরিমান বাইরে যাচ্ছে তা রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ রাখতে হবে। মজুত কতটা পরিমান ফলের মধ্যে কি ধরনের গ্যাস, কতটা পরিমান ব্যবহার হচ্ছে তার রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ রাখতে হবে। ফুড সেফটি লাইসেন্স দরকার। আবেদন করা থাকলেও চলবে। ফল ওঠানামানোকারীদের শরীরে কোনও রোগ থাকলে ওই ফলের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তাই ফল ওঠানামানোকারীদের বছরে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। তার সার্টিফিকেট রাখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। তার পর আবারও আচমকা অভিযান করা হবে। তাতে কোনওরকম ঘাটতি থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।”   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *