পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ অক্টোবর: বৃষ্টি থামলেও ঘাটালে অবনতি হতে চলেছে বন্যা পরিস্থিতির। বাড়ছে শিলাবতী নদীর জল। প্লাবিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। জলের তলায় স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে পৌর ও গ্রামীণ এলাকার একটা বড় অংশ। নিচু এলাকার রাস্তাঘাট জলের তলায়। নৌকা করে চলছে পারাপার।

ঘাটাল পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে রাজ্য সড়কে জল থাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। ঘাটালের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি নৌকো নামানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসীদের ক্ষোভ কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, গত ৪০ বছরেও অধরা ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। শুধু ভোট এলেই নেতাদের মুখে শোনা যায় আশ্বাস বাণী।
এদিকে, কেন্দ্র ও রাজ্য একে অপরের উপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত। টানা বৃষ্টিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় তিন হাজারের বেশি মানুষকে বাড়ি থেকে ত্রাণ শিবিরে সরানো হয়েছে। জেলায় প্রায় কয়েক হাজার একর চাষের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন না হলে চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়বে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত ব্লকের খবর প্রতি মুহূর্তে সংগ্রহ করছে।

ঘাটাল ও সবংয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সবংয়ের সারতা, দশগ্রাম, চাউলকুড়ি, নারায়ণবাড়, বলপাই, ভেমুয়া, মোহাড়, বিষ্ণুপুর ও বুড়াল এলাকায় অনেক মাটির বাড়ি ধসে পড়েছে। জলবন্দি বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানো হয়েছে। সবংয়ে প্রায় ১০০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ২৫০০ বাসিন্দা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। বুধবার জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি ও পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার সবংয়ের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। দুর্গতদের ত্রাণ সামগ্রী বিলি করা হয়। শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, প্রয়োজনীয় সবরকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানো হচ্ছে।
ঘাটাল পুরসভার ১ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড এবং ঘাটাল ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রায় ৩০টি ত্রাণ শিবিরে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠের ধান জলের তলায়। দাঁতন-২ ও নারায়ণগড় ব্লকের বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। একাধিক মাটির বাড়ি ভেঙ্গছে। দুই ব্লক মিলিয়ে প্রায় ১৫টি ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন শতাধিক মানুষ।

ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ দেওয়া হলেও তা বন্যা দুর্গতদের হাতে পৌচ্ছছে না, সবই শাসক দলের নেতা কর্মীরা লুটেপুটে খাচ্ছে। অর্ধেক এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। আমরা দলের পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষদের যতটা সম্ভব সাহায্য করছি।
অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার দেওয়া হয় সবং, পিংলা সহ অন্যান্য বন্যা দুর্গত এলাকায়।
এলাকার স্থানীয় মানুষ কৌশিক হাজরা বলেন, এই সময় প্রচুর অসুবিধা হচ্ছে আমাদের। পানীয় জল নেই, খাবার দেওয়া হচ্ছে না, বিদ্যুৎ নেই, সরকারের তরফে ত্রানের কথা বলা হলেও তা দরিদ্র মানুষের হাতে পৌঁচ্ছছে না। গরিব মানুষের কোনো উপকার হচ্ছে না। দুই সরকারের সদ্বিচ্ছা না থাকলে ঘাটাল মাষ্টার প্ল্যান করা সম্ভব নয়।

