আমাদের ভারত, ২ মার্চ: ডিএ নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্যে প্রতিবাদের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে প্রচুর প্রতিক্রিয়া।
মঙ্গলবার বিধাননগরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ‘আশ্রয় প্রকল্প’-এ বাড়ি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিএ নিয়ে এখন অনেক কথা হচ্ছে। মানুষের কাছে কোনটা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত? যারা অবহেলিত এবং বঞ্চিত, তাদের মুখে ভাত তুলে দেওয়া? নাকি যারা অনেক পাচ্ছে তাদের আরও বেশি পাইয়ে দেওয়া?’ ‘কেন্দ্রের সরকার যখন অনেক টাকা দিচ্ছে, তখন ওখানে গিয়ে যোগ দিন’, ডিএ আন্দোলনকারীদের কড়া বার্তা ফিরহাদের।
এর প্রতিবাদে ফেসবুকে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত পোস্ট করেছেন, “আর সরকারি কর্মচারী তার ন্যায্য বেতনের বকেয়া চাইলে ঘেউ ঘেউ? না পোষালে ছেড়ে দিন হুমকি? তুমি দিয়েছিলে চাকরি? তোমার বাড়ির টাকায় বেতন হয়? তোমার বাড়ির চাকর-বাকর এরা? এসএসসি, পিএসসি-র পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়ারা মাইনে চাইলে তুমি নবাবী দেখাচ্ছ? ত্রিপুরা, সাগরদিঘি, নওসাদ কিন্তু ক্যালেন্ডারের শেষ দিন নয়। কোনটা কার প্রাপ্য বোঝানোর দিন ফুরোচ্ছে না।”
প্রতিক্রিয়ায় ডঃ কল্যাণ কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, “একটা ঘুষখোর, জেলে যাওয়া, মিনি পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখার গলার জোর দেখছেন? নেতাজির মেয়রের চেয়ারে বসে রংবাজ ছেলেদের মতো কথা বলছে, সাহসটা কে যোগাচ্ছে?”
পরিবেশবিদ সমীর বসু বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, “রাজ্য সরকারের যে সমস্ত প্রকল্প খুব জনপ্রিয় এবং তাতে যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ থাকে সেগুলো পরিকল্পিত বরাদ্দ খাতে ধরা হয়। মহার্ঘভাতা, যা বেতনের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে, সেই টাকার বরাদ্দ ধরা হয় এই পরিকল্পিত বরাদ্দের বাইরে। দুটো কখনই এক নয়। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রী এবং নেতানেত্রীদের একাংশ মানুষকে বিভ্রান্তিকর কথা পরিবেশন করে চলেছেন। এই সমস্যার সমাধান না করে তাঁরা এটিকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত।
এবার আদালত নির্দেশিত এই আর্থিক দায়কে ঝেড়ে ফেলতে তৎপর হয়েছেন মন্ত্রিসভার হেভিওয়েট নেতা ফিরহাদ হাকিম। কেন্দ্রীয় সরকারের যথাসময়ে নিয়মিত মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে উল্লেখ করে তিনি, রাজ্য সরকারের কর্মী ও শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে যোগ দিতে পরামর্শ দেন, কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যে রাজ্য প্রান্তিক মানুষের বরাদ্দ কমিয়ে সেই টাকা স্বচ্ছল কর্মীদের বিলিয়ে দেওয়া অন্যায় বলেই মনে করে।
রাজ্যের কর্মচারী সমাজ এই উপদেশ মেনে নিতে পারছেন না কারণ তারা মনে করেন যে এইভাবে কর্মী ও শিক্ষকদের সাধারণ মানুষের কাছে নির্দয় হিসেবে প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা হচ্ছে, যেটি আদপেই একটি অবাস্তব সমীকরণ। রাজ্যের কর্মীদের জন্য আর্থিক দায় রাজ্যকেই বহন করতে হবে।”
মহম্মদ মামুন আল রসিদ ফেসবুকে লিখেছেন, “স্যান্ডো গেঞ্জিকে বোঝা দরকার ডিএ পাইয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, আর ডিএ নির্ধারণ হয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সূচকের উপর নির্ভর করে। তাহলে স্যান্ডো গেঞ্জিদের সরকার বলে দিক, যে তারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করবে না। লিখিত অর্ডার বের করুক। তাহলে কোনও কর্মচারী সরকারি হোক বা বেসরকারি, তারা কখনো ডিএ-র দাবি তুলবে না।“
শতরূপ ঘোষ ববি হাকিমের বক্তব্যের ভিডিও যুক্ত করে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “ববি হাকিম খাঁটি মানুষ, একদম খাঁটি কথা বলেছেন। ডিএ নেওয়াটা পাপ। উনি স্যান্ডো গেঞ্জি পড়ে যেটা নেন সেটা পাপ নয়।”
এক নেটনাগরিক লিখেছেন, “শান্তিপ্রসাদ বাড়িতে সোনা জমাবে। ওটা ওর প্রাপ্য। মানিক লন্ডনে বাড়ি বানাবে। ওটা ওর প্রাপ্য। অনুব্রত পাঁচ -ছ’বার লটারি পাবে। প্রাপ্য। পার্থ-অপার সম্পদ সরাতে লরি লাগবে। প্রাপ্য। কেউ লুঙ্গিতে, কেউ তোয়ালেতে ঘুষ নেবে, সৌগত স্যার টাকা গোছাতে গোছাতে বলবেন, থ্যাঙ্ক ইউ। প্রাপ্য।”
প্রসঙ্গত, ডিএ নিয়ে ফিরহাদের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বুধবারই পুরকর্মীদের একাংশ প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখান। এক সরকারি কর্মচারী সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আপনি যদি বেতন না দিতে পারেন, তাহলে চেয়ার ছেড়ে চলে যান। কর্মচারীরা ৬০ বছর পর্যন্ত মাথা উঁচু করে থাকবে। আপনার মতো পাঁচবছর পরপর নিজের কুর্সি বাঁচানোর জন্য হাতজোড় করে জনগণের কাছে ভিক্ষা চাইতে যাবে না। তাই যত এরকম বাজে কথা বলবেন, এ আন্দোলন তত আরও তীব্র হবে। আপনি পাপে আকণ্ঠ পরিপূর্ণ। তাই আপনাকে আদালতে যেতে হয়। কোনও কর্মচারীকে কোর্টে যেতে হয় না।’