আমাদের ভারত, ১৪ ডিসেম্বর: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে উত্তপ্ত রাজ্য। বিভিন্ন জেলায় আগুন জ্বালিয়ে, রাস্তা অবরোধ, ট্রেন অবরোধ করে বাস ভাঙ্গচুর করে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভের ফলে বহু স্টেশনে ট্রেন আটকে পড়েছে ট্রেন।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে আন্দোলন। আজ সকাল থেকে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ চলছে। হাওড়ায় কোনা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। তারা সকালেই টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারিদের ছোড়া পাথরে এক পুলিশ কর্মী আহত হন। শেষ পর্যন্ত কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে সাময়িকভাবে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আরো বেশি সংখ্যায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে। গরফা থেকে শুরু করে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন জায়গায় তারা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে। এরপর বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরপর ১৫টি বাস জ্বলতে থাকে।
প্রাণভয়ে যাত্রীরা ছোটাছুটি করতে থাকেন প্রায় তিন ঘন্টা ধরে চলে এই তান্ডব। বাসগুলি একেবারে পুড়ে যাওয়ার পরবিক্ষোভকারীরা সরে গেলে দমকল এসে আগুন নেভায়। আটকে পড়া দূরদূরান্তের বাস যাত্রীরা হেঁটেই রওনা দেন। তাঁরা জানেন না কখন পৌঁছবেন।
হাওড়ার একাধিক জায়গায় রেল অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। রেললাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে ট্রেন আটকে দেয় এবং পুলিশকেও পাথর ছুড়তে শুরু করে। প্রাণভয়ে পুলিশ সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সাঁকরাইলে বিক্ষোভকারীরা টিকিট কাউন্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছুটা দূরে একটি পোস্ট অফিসে গিয়েও ভাঙ্গচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাউরিয়ায় রেলের স্লিপার ফেলে অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। এই ঘটনায় হাওড়া থেকে মৌরিগ্রাম পর্যন্ত কোনও ট্রেন চলাচল করছে না। উলুবেড়িয়া থেকে খড়গপুর এর মধ্যে কিছু শাটল ট্রেন চালানো হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে প্রতিদিনই ফুলচাষীর ফুল নিয়ে হাওড়ায় আসেন। এদিন প্রায় ১০০ জন ফুলচাষী আটকে পড়েন উলুবেড়িয়া স্টেশন। ক্ষোভে তাঁরা সমস্ত ফুল ট্রেন থেকে ফেলে দেন।
হাওড়া থেকে মৌরিগ্রাম পর্যন্ত সমস্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। উলুবেড়িয়া থেকে খড়গপুরের মধ্যে কিছু শাটল ট্রেন চালানো হচ্ছে।
একই অবস্থা মুর্শিদাবাদে, সেখানে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিভিন্ন স্টেশনে ভাঙ্গচুর করে অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছে। বেলডাঙার সাজুর মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা এবং তারা তিনটি সরকারি বাস ভাঙ্গচুর করে। একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। বীরভূমে মুরারই স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করে।
বিক্ষোভ হয় পশ্চিম মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, আমডাঙা, শাসন প্রভৃতি এলাকায়। রাস্তা অবরোধের পাশাপাশি ট্রেন অবরোধ করা হয়। এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে নাকাল হয় পরীক্ষার্থীরাও।
এই তাণ্ডবলীলার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। মানুষের ভোগান্তি হলে তা বরদাস্ত করা হবে না। যারা গণ্ডগোল করছে তাদের ছাড়া হবে না। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এর বক্তব্য এইভাবে আন্দোলন করলে বিজেপির হাতকে শক্ত করা হবে।