অন্ডালের বহুলায় ইসিএলের কোলিয়ারীতে আগুন, তরল নাইট্রোজেন দিয়ে আগুন আয়ত্তে আনার চেষ্টা, আতঙ্কে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় বাসিন্দাদের

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ৩১ জুলাই: ভুগর্ভস্থ কয়লা খনিতে আগুন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আশপাশের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ। ঘটনাকে ঘিরে চরম আতঙ্ক ছড়াল ইসিএলের কেন্দ্রা এরিয়ার অন্ডালের বহুলা নর্থ জামবাদ কোলিয়ারীতে।  তরল নাইট্রোজেন দিয়ে আগুন আয়ত্তে আনার জোর তৎপরতা শুরু করেছে ইসিএল।

প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই ইসিএলের কেন্দ্রা এরিয়ার বহুলা কোলিয়ারির নর্থ জামবাদ ইউনিটে খনির পিটে আগুন জ্বলতে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে খনির পিটে দেওয়াল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আগুন ঠেকাতে ওপর থেকে ফ্যানের হাওয়া চালানো হয়। কিন্তু তাতেও রেহাই হয়নি। রবিবার আগুন খনির ভেতর ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। আর তাতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। জানা গেছে, ওই খনিতে দৈনিক ৩০০-৩৫০ টন কয়লা উৎপাদন হত। গত চার দিন ধরে ওই খনিতে বন্ধ রয়েছে উৎপাদন। শনিবার ওপর থেকে বোর হোল করে তরল নাইট্রোজেন স্প্রে করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সুরঙ্গের নীচের আগুন ভয়াবহ আকার নেওয়ায় কার্যত সেটা ব্যর্থ হয়। রবিবার ওপরের ফ্যানঘর (যেখান দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া ও অক্সিজেন খনি গর্ভে পাঠানো হয় ) দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। তাতেই আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। 

নিরাপত্তার স্বার্থে খনি চত্বরে যাওয়া বন্ধ করা হয়। গোটা এলাকাটি ঘিরে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোলিয়ারি এলাকায় থাকা আবাসনের আবাসিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় খনি কর্তৃপক্ষ। এলাকায় মাইকিং করে সরে যাওয়ার নির্দেশ জানিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রতিটি আবাসনের দরজায় আবাসন দ্রুত খালি করে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি সাঁটিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। যদিও শনিবার সন্ধ্যার পর বিপদের আশঙ্কায় আবাসিক ও বাসিন্দারা নিজেদের ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কিছুটা দূরে খোলা আকাশের নিচে। রবিবার ওই কোলিয়ারির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে থাকা বালি ব্যাঙ্কারের বোর হোল থেকে তরল নাইট্রোজেন স্প্রে করার কাজ শুরু হয়। ভেতরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য তরল নাইট্রোজেন ঢালার সিদ্ধান্ত বলে দাবি কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষের। এদিকে খনি গর্ভের আগুন নিয়ে ইসিএল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। অভিযোগ, খনি গর্ভে কয়লা উত্তোলন হলেও নিরাপত্তার তদারকি নজরদারি ঠিকমতো করা হয় না। খনি নিরাপত্তার সঠিক নিয়মিত নজরদারি করা হলে এধরনের দুর্ঘটনা ঠেকানো সম্ভব হত। কয়লা উৎপাদনে লোকসান যেমন হচ্ছে তেমনই বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে আবাসিকরা।

যদিও বহুলা কোলিয়ারীর ইসিএলের এজেন্ট দীনেশ শর্মা সাফাই দেন, “আগুন আয়ত্তে আনার কাজ চলছে।’

ইসিএলের কেন্দ্রা এরিয়ার জিএম রাজকুমার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,” আগুন আয়ত্তে আনার জন্য তরল নাইট্রোজেন স্প্রে করা হচ্ছে। আশপাশের ৪০০ মিটার পর্যন্ত আবাসিকদের খালি করা হয়েছে। মেডিক্যাল ক্যাম্প বসানো হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা টিম রাখা হয়েছে।” 
   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *