পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ অক্টোবর: মেদিনীপুরের জামকুন্ডায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আদিবাসী দম্পতির মৃত্যুর ১২ ঘণ্টার মধ্যেই চাকরি ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে তাদের বাড়িতে হাজির হলেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। হাজির ছিলেন বিধায়করাও।
গ্রেফতার হন এই কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য।
জানা যায়, বুধবার সকালে জামকুণ্ডা এলাকায় গ্রাম সংলগ্ন একটি মাঠের পুকুরে আদিবাসী দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সকালে মা বাবাকে বাড়িতে না পেয়ে খুঁজতে গিয়ে পুকুরের পাড়ে মায়ের নিথর দেহ দেখতে পায় ওই দম্পতির ছেলে। পরে গ্রামবাসীদের জানাতে তারা এসে পুকুরের পাড়ে বিছানো তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেখতে পেয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে তার বাবাকেও জল থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। মৃতদের নাম বাপি
মান্ডি (৩৫) ও মুগলি মান্ডি(৩০)। ভোরবেলা কোনো কাজে গিয়ে ওই পুকুরে গিয়ে ওই দম্পতির বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল বলে ধারণা স্থানীয়দের। আদিবাসীদের পরবের দিনে এই মৃত্যুর ঘটনায় দিনভর উত্তেজনা ছিল এলাকায়।
জানা গিয়েছে, গ্রামের পাশে থাকা তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সৈয়দ আলীর পুকুর ছিল। সেই পুকুর থেকে মাছ চুরি হয়ে যাওয়া আটকাতে তিনি নাকি বিদ্যুতের তারের বেড়া দিয়েছিলেন। যা নিয়ে আগেই গ্রামবাসীরা সতর্ক করেছিল ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে। তবে তিনি কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেননি বলে দাবি স্থানীয়দের। এই ঘটনার পর সন্ধ্যের মধ্যেই কোতোয়ালি থানার পুলিশ অভিযুক্ত সৈয়দ আলীকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানান, “অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে আদালতে পাঠিয়ে।”
এই ঘটনার পর আজ সন্ধেয় মৃত দম্পতির বাড়িতে হাজির হন বিধায়ক দিনেন রায়। তিনি বলেন, “অসহায় পরিবার, দুই ভাইয়ের পরিবারে একমাত্র রোজগেরে যুবক ছিল বাপি। ওই দম্পতির একটি ১৯ বছরের ছেলে অপরজন প্রতিবন্দী, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে বলেছি।”
এরপরে সন্ধে সাতটার পর জামকুন্ডা গ্রামে ছুটে যান জেলাশাসক আয়েশা রানি, পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার ও বিধায়ক অজিত মাইতি। পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে এই মৃত্যুর জন্য পরিবারকে চার লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। সমস্ত রকম ভাবে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তারা।
জেলাশাসক আয়েশা রানী বলেন, “দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটেছে। প্রশাসন তাদের পাশে আছে। আপাতত তাদের পরিবারের হাতে দু’ লক্ষ করে দুজনের জন্য ৪ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের বড় ছেলে যেহেতু ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে আছে তাকে স্পেশাল হোম গার্ডের চাকরিতে নিয়োগ করা হচ্ছে।”