আমাদের ভারত, ২৭ সেপ্টেম্বর: উৎসবের মরসুম কড়া নাড়ছে, তারপরেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার। কিন্তু কানাডার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে ডালের দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারত কানাডা থেকেই সব থেকে বেশি পরিমাণে ডাল আমদানি করে।
বাসমতি চাল, পিঁয়াজ সহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে ইতিমধ্যেই মোদী সরকার খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আটকাতে বেশ কিছুটা সক্ষম। কেন্দ্র চায়নি রপ্তানির প্রভাবে দেশের বাজারে কোনো খাদ্য দ্রব্যের ঘাটতি থাকুক। ঘাটতির ফলে দেশের বাজারে এগুলির দাম বাড়তে পারে। কিন্তু এই সময়ে ভারত সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আরোহর এবং বিউলি বালের স্টক লিমিট ৩০ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সিদ্ধান্ত সেই সময় নেওয়া হয়েছে যখন কানাডা ও ভারতের মধ্যে ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছে। কানাডা থেকে সবচেয়ে বেশি ডাল আমদানি করে ভারত। তাই ভারত কানাডা সম্পর্কের অবনতির ফলে ডালের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
দু’দেশের মধ্যে বেশ কিছু বাণিজ্য চুক্তি ছিল। আপাতত সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে। ভারত কানাডা থেকে সর্বাধিক মুসুর ডাল এবং এমওপি সার আমদানি করে। ২০২৩ সালে কানাডা এবং ভারতের মধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বাণিজ্য হয়েছিল। কৃষি সম্পর্কিত বাণিজ্যে ভারত কানাডা থেকে সর্বাধিক মুসুর ডাল ও এমওপি সার আমদানি করে।
কিন্তু দু’দেশের মধ্যে বর্তমানের উত্তেজনা পরিস্থিতির জন্য কানাডা ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। মুসুর ডাল ও এমওপি সার আমদানি না করার কারণে ডালের দাম বেড়ে যেতে পারে এবং সারের ঘাটতির কারণে দেশে চাষের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
আগামী দিনে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য কেন্দ্র কি নীতি বা কৌশল অবলম্বন করবে? এই দুই পণ্যের আরো রপ্তানিকারক রয়েছে বিশ্ববাজারে। ভারত প্রতিবছর কানাডা থেকে গড়ে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টন ডাল আমদানি করে। ভারতের ডালের বার্ষিক প্রয়োজন ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টন। ২০২০-২১ সালের ডাল আমদানি সর্বোচ্চ ১১.১৬ লক্ষ টন ছুঁয়েছিল, আবার ২১-২২ সালে তা ৬.৬ -৭ লক্ষ টনে কমে আসে। ২১-২২ দেশে মসুর ডাল উৎপাদন হয়েছিল ১২.৬৯ লক্ষ টন। ২০২২-২৩ সালে দেশে ডালের উৎপাদন হয়েছিল ১৫.৯৯ লাখ টন। এভাবে দেশের মোট ডালের উৎপাদন ও আমদানির কারণে বর্তমানে মুসুর ডালের ঘাটতি খুব বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভারতের কাছে কানাডার বিকল্প হিসেবে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কারণ অস্ট্রেলিয়া ডালের বড় উৎস। এটি একটি বড় রপ্তানিকারক দেশ। ২০২২- ২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩.৫ লক্ষ টন ডাল আমদানি করেছিল শুল্ক অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকান ডালের আমদানিও বাড়তে পারে।
এদিকে দেশের ডালের চাষ শুরু হবে আগামী মাস থেকে। ফলে বার্ষিক প্রয়োজন মেটাতে যে পরিমাণ ডাল লাগে তা নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ করতে কেন্দ্রের সামনে অনেক পথ খোলা রয়েছে।