সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ৩০ অক্টোবর: চোরা পথে ভারতে ঢুকে জাল নথি দেখিয়ে ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করছিল বাবা ও ছেলে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাটি গাইঘাটা থানার মোড়লডাঙ্গা গ্রামের।
সম্প্রতি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর অভিযোগে ফাঁস হয় গোটা জালিয়াতির চক্র। বৃহস্পতিবার ধৃত যুবকের বাবাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের নাম হরিচাঁদ মণ্ডল (৩৫) ও তাঁর বাবা সুজয় কুমার মণ্ডল (৫৬)। তাদের আদি বাড়ি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার ঝিটকি গ্রামে। অভিযোগ, হরিচাঁদ বাংলাদেশেই বিয়ে করে তহমিনা খাতুন নামে এক মহিলাকে। কিন্তু সাংসারিক অশান্তির জেরে স্ত্রীকে বাংলাদেশেই রেখে চোরা পথে সে মা-বাবাকে নিয়ে ভারতে চলে আসে। ভারতে আসার সময় তাদের কাছে ছিল বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা। সীমান্ত পার হয়ে তারা গাইঘাটার মোড়লডাঙ্গা গ্রামে এসে বসবাস শুরু করে। এখানেই জাল কাগজপত্র তৈরি করে নিজেদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করে তারা। পুলিশ জানায়, স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় তারা ভোটার কার্ড, আধার কার্ডসহ একাধিক সরকারি নথি সংগ্রহ করেছিল। ভারতে এসে হরিচাঁদ দ্বিতীয়বার বিয়ে করে পূজা রায় নামে এক মহিলাকে। তারও মূল বাড়ি বাংলাদেশে। পূজা পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে আসলেও, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অবৈধভাবে এদেশে থেকে যায়। এরপরই সে হরিচাঁদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঘটনার সূত্রপাত হরিচাঁদের প্রথম পক্ষের স্ত্রী তহমিনা খাতুনের অভিযোগে। তিনি বনগাঁ পুলিশ জেলার সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান যে, তাঁর স্বামী হরিচাঁদ তাঁকে বাংলাদেশে রেখে ভারতে এসে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছে এবং জাল নথির মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জন করেছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, তাঁকে বারবার অভিযোগ প্রত্যাহারের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তহমিনার সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গত সপ্তাহে গাইঘাটা থানার পুলিশ প্রথমে হরিচাঁদ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তদন্তের পর বৃহস্পতিবার পুলিশ হরিচাঁদের বাবা সুজয় কুমার মণ্ডলকেও গ্রেপ্তার করে। এদিন ধৃত সুজয় কুমার মণ্ডলকে বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির জাল নথি ব্যবহার, ভুয়ো পরিচয়ে ভোটার ও আধার কার্ড সংগ্রহ এবং অবৈধভাবে দেশে থাকার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। অন্যদিকে, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তিও এই নথি তৈরির প্রক্রিয়ায় সাহায্য করেছিল। সেই দিকেও এখন তদন্ত এগোচ্ছে। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “এটি কেবল একটি পরিবারের নয়, এর পেছনে একটি চক্র সক্রিয় থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”

