সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৬ মার্চ: বকেয়া পাওনা না পেয়ে শুক্রবার সকাল থেকে বড়জোড়া রেঞ্জ অফিসের সামনে অনশনে বসেছেন ৭৮ জন বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকা শ্রমিক। শনিবার বিকেল পর্যন্ত বন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো আশ্বাস না মেলায় বড়জোড়া রেঞ্জ অফিসের সামনে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অনশনকারীরা রেঞ্জ অফিসের দরজার সামনে বসে পড়েন। যারফলে শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত রেঞ্জ অফিসেই কার্যত বন্দি হয়ে রইলেন বিদায়ী এবং নবাগত দুই রেঞ্জ অফিসার।
দীর্ঘদিন বড়জোড়া রেঞ্জের দায়িত্বে ছিলেন ঋত্বিক দে। তিনি বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। তার জায়গায় এসেছেন সৈয়দ সফিউর রহমান। শুক্রবার ঋত্বিক দে তাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে চলে যাচ্ছেন শুনেই শ্রমিক ও পাওনাদারেরা অফিসের সামনে বিক্ষোভ ও অনশনে বসে পড়েন। বড়জোড়ায় ভাড়া করা ৪টি গাড়ি চলে। সাফিউল তরফদার নামে এক গাড়ির মালিক ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা পাবেন বলে দাবি করেন। লব ঘোষ নামে আরেক গাড়ির মালিকের পাওনা ৫ লাখ টাকা। তাদের দাবি, হাতি বেশি ঢুকলে মৌখিক ভাবে আরও বাড়তি গাড়ি দিতে বলেন রেঞ্জ অফিসার। সেই মত হুলা পার্টির লোক বাড়ানোর জন্য বলেন, হুলা সরবরাহ, হুলার জন্য তেল, হাতির খাবার সরবরাহের জন্য সস্তার সবজি, কলাগাছ ইত্যাদির বরাত দেন রেঞ্জার। এইভাবে প্রায় ৬০ লাখ টাকা পাওনা।
সফিরুল তফাদার বলেন, ২০১৪ থেকে এই রেঞ্জে গাড়ি দিচ্ছি। ২০১৮ থেকে কোনো মাসে ১০ হাজার কখনও ৩ মাস পর ১৫ হাজার এই ভাবে বাকি পড়েছে। লব ঘোষের দাবিও তাই। তিনি বলেন, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে গাড়ি চালিয়েছি। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় আরও বাড়তি গাড়ি দিয়ে পরীক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে সেন্টার নিয়ে যাওয়া, আসা করিয়েছি। গত এক বছর ধরে ৯ জন মহিলা শ্রমিক নার্সারিতে কাজ করে মাইনে পাননি। তারাও এদিন অনশনে বসেছেন।
এবিষয়ে শাসক দলের বিরোধীরা এখানেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। সিপিআইএম নেতা সুজয় চৌধুরী বলেন, হাতি তাড়ানোর নামে জেলার একেকটি রেঞ্জে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। তার দাবি, কোনো লিখিত অর্ডার ছাড়াই কি করে লোক নিয়োগ, গাড়ি এনগেজড, হুলা পার্টি মোতায়েন, হাতির খাবারের বরাত হয়? এটাই তো দুর্নীতির বড় প্রমাণ।
বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁর অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের যোগসাজসে বন কর্তারা মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করিয়ে তাদের মজুরি না দিয়ে সব আত্মসাৎ করেছে। রাজীব ব্যনার্জি মন্ত্রী থাকাকালীন সময় থেকেই এই দুর্নীতি হয়েছে। বড়জোড়ার বিধায়ক চুপ কেন রয়েছেন বলে প্রশ্ন তোলেন সৌমিত্র খাঁ। তিনি বলেন, অবিলম্বে সকলের পাওনা মিটিয়ে তদন্ত করা হোক।
বড়জোড়ার নতুন রেঞ্জ অফিসার সৈয়দ সফিউর রহমান বলেন, আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তারা নির্দেশ দিয়েছেন বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে লিখিত ভাবে তাদের কি পাওনা তা নিতে বলেছেন। সেইমত অনশনকারীরা লিখিত দাবি পত্র জমা দিয়ে অনশন তুলে নেন। ১ মাসের মধ্যে সমাধান না হলে ফের আন্দোলনে নামবেন বলে তারা জানিয়েছেন।