ফসলের ক্ষতিপুরণ পেতে করুন অর্তি, দুর্গাপুর শিল্পশহর লাগোয়া সোঁনাইচন্ডীপুরের চাষীদের

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ৫ আগষ্ট: এক টুকরো ছিটমহল। পেয়েছে ভোটারকার্ড। রয়েছে আধার কার্ড। ভোটও দেয়। নেই শুধু বসত আর চাষ জমির পাট্টা। দামোদরের জলে প্লাবিত হয়েছে চাষ করা জমি। জল নামলেও নষ্ট হয়েছে ফসল। বন্যায় নষ্ট হলেও পাট্টা না থকায় ফসলের ক্ষতিপুরণ পেতে মাথায় হাত পড়েছে দুর্গাপুর শিল্পশহর লাগোয়া সোঁনাইচন্ডীপুর। কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে দুঃশ্চিন্তায় চাষীরা। 

 দুর্গাপুর শিল্পশহর লাগোয়া দামোদরের নদের তীরে সোঁনাইচন্ডীপুর। প্রায় ৪০টি পরিবারের বসবাস। দুর্গাপুর লাগোয়া হলেও বাঁকুড়া জেলার মেজিয়া ব্লকের অধীনে গ্রামটি। দামোদরের তীরে মানাচরে চাষবাসই জীবনজীবিকা। বিগত ৪০ বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছে। বহু আবেদনর পর জুটেছে ভোটার কার্ড, আধারকার্ড। গ্রামে কোনও উন্নয়নের ছিটেফোঁটা জোটেনি। না আছে রাস্তাঘাট, না আছে পানীয় জলের সরকারি ব্যবস্থা। জবকার্ড থাকলেও একশ দিনের কাজ জোটে না। এমনকি বিদ্যুত পরিষেবাটুকুও গ্রামে পৌঁছয়নি। বছর খানেক আগে কমিউনিটি হল তৈরী করে দিয়েছে মেজিয়া পঞ্চায়েত সমিতি। রেশনকার্ড থাকলেও নদী পেরিয়ে ৫ কিলোমিটার দুরে যেতে হয় রেশন তুলতে। এককথায় চরম বঞ্চনার শিকার।

তবে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের পর সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলাপ্রশাসন সার্ভে করে। তাতে সোঁনাইচন্ডীপুরকে মেজিয়া ব্লকের বানজোড়া পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্তি করা হয়। তারপরই তৈরী হয়েছে নতুন ভোটারকার্ড। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভোটারকার্ড হাতে পায় গ্রামবাসীরা। গ্রামের ৭৭ জন ভোটার। গ্রামের কমিউনিটি হলে বুথ। বাঁকুড়া লোকসভার (২৪৭নং) ৯৫ নং বুথ সোনাইচন্ডীপুর। ২০১৯ সালে লেকসভায় প্রথম ভোট দেয় গ্রামবাসীরা। ভেটাধিকার পেলেও আক্ষেপ বসত ও চাষজমির পাট্টা না পাওয়ায়। দামোদরের চরে প্রায় ২০০ বিঘা জমিকে চাষ উপযোগী করে তুলেছে। বালি মাটিতে ফলছে সোনার ফসল। মূলত সারা বছরই সব্জি চাষ বেশী হয়। সরষে, ধনে, মুলো, গাজর, বিট, পালং শাক, বেগুন, ভুট্টা, পেঁপে, কুল, কলা, বিভিন্ন ধরনের কপি, ঢেঁড়স, পটল, বাদাম নানান চাষে নজির রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্প বসিয়ে সেচের জল ব্যবহার করে।

উৎপন্ন সব্জির একমাত্র বাজার দুর্গাপুর বেনাচিতি, স্টেশন বাজার, চন্ডিদাস ও মামড়া বাজার। কৃষির ওপর নির্ভরশীল গ্রামবাসীরা। মতুয়া সম্প্রদায় ভুক্ত এই গ্রামের মানুষ বছরে একবার ধুমধাম করে কালি পুজো করে।

গত কয়েকদিনের বর্ষায় দামোদরের জলে প্লাবিত গোটা গ্রাম। জলের তলায় চাষ জমি। দিন পনেরো আগে নষ্ট হয়েছে বাদাম চাষ। তার পর সম্প্রতি ভুট্টা, বেগুন, পটল, করলা, শসা, ঝিঙে চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জল জমে পচে নষ্ট হয়েছে ভুট্টা, পটল সহ সবরকম সব্জি। জল নামার পর কোনওভাবে বাঁচাতে মরিয়া চাষীরা।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষী হরেন তালুকদার, দুলাল মাহালি, আনন্দ বিশ্বাস প্রমুখ জানান, “ধার দেনা করে চাষ করেছিলাম। বাদাম প্রচুর লোকসান হয়েছে। সব্জিতে সেই লোকসান কাটিয়ে ওঠার আশা দেখেছিলাম। কিন্তু সেই আশাও শেষ।” গ্রামবাসীরা জানান, “বিঘা প্রতি প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা ছিল এবছর ভালো মুনাফার। কিন্তু যেভাবে সব্জি নষ্ট হয়েছে, ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব।  ক্ষতিপুরণের জন্য ব্লকেও গিয়েছিলেন। কিন্তু, জমির পাট্টা না থাকায় জটিলতা তৈরী হয়েছে। তাই দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে। সরকারের কাছে আবেদন, যদি ফসলের ক্ষতিপুরণ দেয়, তাহলে নতুন করে চাষ করার আশা দেখবে। যদিও মেজিয়া ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, কৃষকদর ক্ষতিপুরনের বিষয়টি ফসলের ওপর নির্ভর করেছে। বিষয়টি ব্লক কৃষি দফতর দেখছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *