আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ১৮ সেপ্টেম্বর: সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী খুনের ঘটনায় দিনভর উত্তপ্ত রইল বীরভূমের রামপুরহাট থানার তুম্বুনি গ্রাম। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মারধরের পাশাপাশি দিনভর রামপুরহাট – দুমকা রাস্তা অবরোধ করে রাখলেন আদিবাসী সমাজ। রাস্তায় আগুন ধরিয়ে চলে বিক্ষোভ। উত্তপ্ত আবহাওয়ার মাঝেই বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মৃত ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। পরিবারের সদস্যরা বিজেপির প্রতিনিধি দলের কাছে খুনের সিবিআই তদন্ত দাবি করেন। সেই সঙ্গে দেহের বাকি অংশ উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ময়নাতদন্তের দাবি জানায়।
প্রসঙ্গত, ২৮ আগস্ট বীরভূমের রামপুরহাট থানার বারোমেশিয়া গ্রামের এক নাবালিকাকে অপহরণ করা হয়। সে স্থানীয় শ্যামপাহাড়ি শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষাপীঠের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ওই স্কুলের শিক্ষক মনোজ কুমার পাল তাকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে খুন করে বলে অভিযোগ। এরপর তার দেহ তিন টুকরো করে কালিডাঙ্গা সংলগ্ন সেচখালে ভাসিয়ে দেয়। ওই শিক্ষক আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার রাতে ছাত্রীর দু-টুকরো দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এখনও কোমরের নিচের অংশ, দুটি পা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বুধবারই রাতে দেহের অর্ধেকাংশ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এতেই ক্ষেপে ওঠে আদিবাসী সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আদিবাসীরা গ্রামের স্কুলের সামনে জমায়েত হতে থাকেন। সেই সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সাহা স্কুলে গেলে তাকে মারধর করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশকে কিল ঘুসি খেতে হয়। শেষ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষককে গাড়িতে চাপিয়ে রামপুরহাট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আদিবাসীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা পুলিশকে এলাকা ছাড়া করে। সংবাদ মাধ্যমকেও মারধর করে বের করে দেয়। উত্তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যেই মৃত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা, মহিলা মোর্চার জেলা সভানেত্রী রশ্মি দে, শুভাশিস চৌধুরী। পরিবার বিজেপির প্রতিনিধি দলের কাছে খুনের সিবিআই তদন্তের দাবি জানায়। ধ্রুব সাহা তাদের দাবি দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন। এরপরেই তারা রামপুরহাট থানায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি।
ধ্রুব সাহা বলেন, “এই ঘটনা একজনের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এর পিছনে বড় মাপের হাত রয়েছে। হাত রয়েছে তৃণমূলের। সেই কারণে এদিন ছাত্রীর পরিবারের বাড়ি যাওয়ার সময় আমাদের বাধা দেয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মঙ্গল টুডু। আমারা তাদের বাধা উপেক্ষা করে মৃতার বাড়ি পৌঁছোই। পরিবারের সদস্যরা আমাদের কাছে সিবিআই তদন্ত চেয়েছে। সেই সঙ্গে মৃতদেহ ফরেনসিক তদন্তের দাবি করেছে। আমরা তাদের দাবি সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানাবো। এই খুনের পিছনে পুলিশের ব্যর্থতা রয়েছে। পুলিশ প্রথম দিকে তৎপর হলে মেয়েটিকে খুন হতে হত না।”
ছাত্রীর দিদা নীলিমা বেসরা বলেন, “আমাদেরকে প্লাস্টিকে জড়িয়ে মৃতদেহ দিয়েছে পুলিশ। শুধু কঙ্কাল। আমরা নাতনিকে চিনতে পারিনি। তার পায়ের অংশ পাইনি। পুলিশ ফরেনসিক তদন্ত না করেই মৃতদেহ দিয়েছে। আমরা সিবিআই তদন্ত চাই। সেই সঙ্গে মৃতদেহ তুলে কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করাতে হবে। আমার নাতনিকে একা কেউ খুন করেনি। এর সঙ্গে আরও যারা যুক্ত রয়েছে তাদেরও গ্রেফতার করতে হবে”।