মিছে কথা, মিছে ছবির আবর্তে বাড়ছে জটিলতা, সতর্কতার পথ কী

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ১৪ জুন: “কয়েক হপ্তা আগের ঘটনা। খ্যাতনামা সাংবাদিক টিভি-সঞ্চালক মারা গেলেন, অগ্রজ সংযত শোকজ্ঞাপন করলেন চমৎকার একটি লেখায়। শোকজ্ঞাপন ভাইরাল হল, মুঠোফোনে ঘুরতে থাকল হাতে হাতে। পর দিনই আর একখানা ছবি ভাইরাল। কয়েকজন কিশোর, তার মধ্যে একজন আর একজনকে ধুতি পরিয়ে দিচ্ছে। ক্যাপশন, নরেন্দ্রপুরের হস্টেলে সেই অগ্রজ অনুজকে ধুতি পরিয়ে দিচ্ছেন। ছবিটি ভুয়ো, অর্থাৎ ফেক।

এমন অজস্র ছবি, গল্প সামাজিক মাধ্যমে হাতে হাতে ঘোরে, যার অনেকগুলোই ভুয়ো। হয় অনেকগুলোই নির্বিষ। অর্থাৎ আপনি ঠকতে পারেন, ভুল ছবি দেখে আবেগতাড়িত হতে পারেন, তার বেশি ক্ষতি নেই।“

২০২১-এর ১ জুলাই সংশ্লিষ্ট একটি বইয়ের রিভিউ করতে গিয়ে একটি দৈনিকে কথাগুলো লিখেছিলেন বিষাণ বসু। বিপজ্জনক ফেক নিউজ এবং তার মুখ্য অভিঘাত নিয়ে প্রকাশিত বইটির নাম ‘ফেসবুক: মুখ ও মুখোশ’। লেখক তিনজন। অর্ক দেব, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা, সিরিল স্যাম। শেষ দু’জন ইংরেজিতে একখানা বই লিখেছিলেন “দ্য রিয়েল ফেস অফ ফেসবুক”। বইটি রীতিমতো জনপ্রিয়। নাম শুনে ইংরেজি বইয়ের ভাষান্তর মনে হলেও বর্তমান বইটি প্রায় নতুন।

মঙ্গলবার প্রেস ক্লাব, কলকাতায় এ বিষয়ের ওপরেই মনোজ্ঞ একটা কর্মশালা হল। ওই ‘ফ্যাক্টশালা’-র পণ্ডিতমশাই ছিলেন গুগুল নিউজ ইনিশিয়েটিভ ইন্ডিয়া ট্রেনিং নেটওয়ার্কের বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ সাংবাদিক জয়দীপ দাশগুপ্ত। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন কেন, কীভাবে, কতটা সতর্ক থাকতে হবে আমাদের। টুলস বা প্রযুক্তির পাহারাদারির আগেই আমাদের বোধ-বুদ্ধি-অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে হবে খবর বা ছবির সত্যতা।

ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর স্বাগত ভাষণে বলেন, “নিউজ কখনও ফেক হবে না। সাংবাদিকদের একটা দায় আছে, নিজের কাছে, সমাজের কাছে। ঘোলা জলে অনেকে নানা উদ্দেশ্যে বা ভুল করে ভুল ছবি বা তথ্য পরিবেশন করেন। আমাদের বোধবুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, কারিগরী প্রকৌশলের সাহায্যে তার মোকাবিলা করতে হবে।“

মিছে কথা, মিছে ছবির আবর্তের এই সমস্যা যে বিশ্বব্যাপী, তা জানিয়েছেন জোসেফ লিখটারম্যান। ২০১৮-র ১৩ জুন তিনি জানিয়েছিলেন, “২০১৮-র শুরুর দিকে নির্বাচনের আগে ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য একজোট হয় মেক্সিকোর বিভিন্ন গণমাধ্যম, সংবাদ সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো। তারা তথ্য-যাচাই ও ভুয়া খবরকে মিথ্যা প্রমাণের একটি সমবেত উদ্যোগ নেয়, যার নাম দেওয়া হয় ‘ভেরিফিকাদো ২০১৮’।

এই ভাঁওতাবাজদের তৎপরতা যেমন বাড়ছে, তাঁদের ওপর নজর রাখতেও তৎপর বেশ কিছু নজরদার। যেমন ‘গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক’। অলাভজনক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংস্থাগুলির সমন্বয়ে গঠিত যা কাহিনী তৈরি করে, প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে, সংস্থান সরবরাহ করে এবং অনুরূপ অলাভজনক গোষ্ঠী তৈরি করতে উৎসাহিত করে৷

জয়দীপ জানালেন, সমস্যাটা বাড়ছে কারণ সামাজিক মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানিক পাহারাদারি ছাড়াই এককভাবে অনেকে তথ্য বা ছবি শেয়ার করছেন। ফলে, বিভিন্ন ধাপে ভুল ধরার সুযোগটা কম থাকে। সে কারণে সামাজিক মাধ্যমের খবরগুলোকে আরও সতর্কভাবে দেখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *