আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ১ ডিসেম্বর: মন্ত্রীর দাবি ফুৎকার দিয়ে উড়িয়ে ফের খেলার মাঠে মেলা করার প্রস্তুতি শুরু করল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বকলমে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার স্কুল পরিচালনা সমিতির মনোনীত সভাপতি আরশাদ হোসেন। বিরোধীদের অভিযোগ মন্ত্রীর মদতেই মিলেছে মেলার ছাড়পত্র।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ স্কুল পরিচালনা সমিতির নির্বাচন। ফলে প্রতিটি স্কুলে তৃণমূলের তাদের পছন্দের লোকেদের মনোনীত হিসাবে সভাপতি করে রেখেছে। একই ভাবে শতাব্দী প্রাচীন রামপুরহাট হাইস্কুলের পরিচালনা সমিতির সভাপতি হিসাবে বসানো হয়েছে আরশাদ হোসেন নামে এক তৃণমূল নেতাকে। তিনি আবার রামপুরহাট পুরসভার কর্মী। তার ভাই আব্বাস হোসেন রামপুরহাট পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর। দল পাশে থাকায় আরশাদ স্কুলের সম্পত্তিকে বানিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। হাইস্কুল খেলার মাঠে মেলা করার পাশাপাশি স্কুলের প্রাচীর ভেঙ্গেভদোকান ঘর নির্মাণও শুরু করেন তিনি। এর প্রতিবাদে পথে নামেন স্কুলের প্রাক্তনী থেকে সমস্ত বিরোধী দল। অবস্থা আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে এনিয়ে হস্তক্ষেপ করেন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র, রামপুরহাটের বিধায়ক, কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পরিচালনা সমিতির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন স্কুলের সম্পত্তি বনিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না। সেই সঙ্গে খেলার মাঠে মেলা করা যাবে না। আশিসবাবুর কথা মতো পরিচালনা সমিতি পিচ্ছু হঠা। পরিচালনা সমিতির সম্পাদক নুর উ জাম্মন হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে পরিচালনা সমিতির সিদ্ধান্তের কথা শহরবাসীকে জানিয়ে দেন। বর্তমান ওই প্রধান শিক্ষক অবসর নিয়েছে। এই সুযোগে পরিচালনা সমিতির সভাপতি আরশাদ হোসেন সুকৌশলে ফের নিজের সংস্থার নামে মেলার ছাড়পত্র আদায় করে নেন।
ঠিক হয়েছে ১৪ ডিসেম্বর থেকে মেলা শুরু হবে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার মহকুমা শাসক সহ প্রশাসনের সর্বস্তরে মেলা বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররা। একইভাবে মেলা বন্ধের আবেদন মহকুমা শাসকের কাছে জমা দিয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস। প্রাক্তন ছাত্র অমিতাভ হালদার, চিকিৎসক দীপেন্দ্র নাথ পণ্ডিত, মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায, ললিত ভট্টর, জয়ন্ত হালদাররা বলেন, “আমাদের দাবি খেলার মাঠে মেলা বন্ধ হোক। কৃষিমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হোক”। বিজেপির রামপুরহাট শহর সভাপতি নীলকন্ঠ বিশ্বাস বলেন, “কৃষিমন্ত্রীর ইশারাতেই মেলার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কারণ দিন কয়েক আগে বিদায়ী কাউন্সিলর আরশাদ হোসেনের ভাই দল ছাড়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তারপরে আশিসবাবু তাকে মেলা করার ছাড়পত্র দেওয়ার বিনিময়ে দল না ছাড়ার চুক্তি করেন। তা নাহলে একজন মনোনীত সভাপতি কিভাবে মন্ত্রীর নির্দেশকে উপেক্ষা করেন”!
কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ বলেন, “আশিসবাবু শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন। তিনি বিদায়ী কাউন্সিলর আব্বাস হোসেনের সঙ্গে মেলা নিয়ে সন্ধি করে মানভঞ্জন করছেন। রামপুরহাটের মানুষ এই খেলা বুঝতে পেরেছেন। ক্ষমতা থাকলে নির্দেশ অমান্য করার জন্য আরশাদ হোসেনকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিক। দেখব কত ক্ষমতা”।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নির্মল মণ্ডল বলেন, “এসব দেখে পরিচালনা সমিতি। সেখানে সরকার একজনকে মনোনীত করে বসিয়েছেন মাথার ওপর। ফলে তিনিই সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন”। পরিচালনা সমিতির সভাপতি আরশাদ হোসেন বলেন, “হাইস্কুল মাঠে দীর্ঘদিন ধরে মেলা হয়ে আসছে। স্কুলকে টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। তাই মেলার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের ব্যক্তিস্বার্থ রয়েছে”। কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি আগেও যে কথা বলেছি এখনো সেই সিদ্ধান্তে অনড়। খেলার মাঠে মেলা করতে দেওয়া হবে না। এখন কলকাতায় রয়েছি। বুধবার এনিয়ে কথা বলব সবার সঙ্গে”।