আমাদের ভারত, ২৫ সেপ্টেম্বর: বিশ্ব স্বাস্থ্য-সংস্থা (হু)-র হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১.৫ বিলিয়ন শ্রবণ শক্তির ঘাটতি নিয়ে জীবন যাপন করেন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী ২৫ বছরে অর্থাৎ ২০৫০ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াবে ২.৫ বিলিয়ন।
পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন শিশুর শোনবার শক্তি নেই বললেই চলে। এদের ৬০ শতাংশের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল। স্রেফ সচেতনতার অভাবে এইসব শিশুদের বিশেষ ভাবে সক্ষম হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। শ্রবণ সংক্রান্ত সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ২২ – ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে ’ইন্টারন্যাশনাল উইক অফ ডেফ পিপল’।
এই উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অফ অটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট অফ ইন্ডিয়া’ (এওআই) কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। উন্নত প্রযুক্তির চিকিৎসার সাহায্যে কানের অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু শ্রবণ শক্তির ব্যাপারে আমজনতার সচেতনতা তুলনামূলক অনেকটাই কম।
এওআই -র সর্বভারতীয় সভাপতি ইএনটি শল্যবিদ সার্জন ডাঃ দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় জানালেন যে, অতিরিক্ত হেড ফোন ব্যবহার করলে শ্রবণ শক্তি কমে যাবার ঝুঁকি থাকে। উৎসবের সময় শব্দবাজির তাণ্ডবে কানের ভয়ানক ক্ষতি হয়, ক্রমশ শোনার ক্ষমতা কমতে থাকে। দুর্গা পুজোর সময় থেকেই শব্দবাজি আর মাইকের দাপট শুরু হয়।
কালীপুজোর সময় ব্যাপারটা অসহনীয় হয়ে ওঠে। শিশু থেকে বয়স্ক কতজন মানুষ যে পটকার শব্দে বধিরতার দিকে এগিয়ে যান তার হিসেব নেই। তাই অ্যাসোশিয়েশনের পক্ষ থেকে খ্যাতনামা নাক কান গলা বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে অনুরোধ জানিয়েছেন, বলেন ডাঃ দ্বৈপায়ন মুখার্জি।
বারে বারে সর্দিকাশি থেকে কানের সংক্রমণ হয়। বৃষ্টিতে ভিজে বা পুকুরে স্নান করার ফলে কান থেকে রস পড়া বা কানে ব্যথার সমস্যা হলে শ্রবণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এরকম সমস্যা হলে অবশ্যই ইএনটি বিশেষজ্ঞর পরামর্শে চিকিৎসা করানো উচিৎ বলে জানালেন এওআই -র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ডা: উৎপল জানা।
সংস্থার সম্পাদক ডা: অজয় খাওয়াস জানালেন যে, অন্য অনেক অসুখের মতই কানে শোনার অসুবিধে যদি জন্মের সময় নির্ণয় করা যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালী ‘হিয়ারিং এড’ দিয়ে বা দরকার হলে ‘ককলিয়া ইমপ্ল্যান্ট’ করে শিশুর শ্রবণ শক্তি ফিরিয়ে আনা যায়।
সংস্থার সদস্য আর এক ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ স্নেহাশিস বর্মণ জানালেন যে, নাগাড়ে হেডফোন ব্যবহার করলে প্রথমে সাময়িক ও পরবর্তীতে সম্পূর্ণ ভাবে বধিরতার ঝুঁকি থাকে। কাজের জন্য প্রয়োজন হলে ৫০ ডেসিবলের কম মাত্রার শব্দ কম্পাঙ্ক যুক্ত হেড ফোন ব্যবহার করা উচিৎ। একথাও মনে রাখা উচিৎ যে টানা ২ ঘন্টার বেশি হেড ফোন ব্যবহার চলবে না।
২৮ সেপ্টেম্বর সকলে পুজোর আনন্দে মেতে থাকবেন, ওই দিন ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য ডেফ। এওআই -এর সর্বভারতীয় সভাপতি ডাঃ দ্বৈপায়ন মুখার্জি জানালেন, শোনার সহায়ক স্নায়ু (অডিটরি নার্ভ) দুর্বল থাকলে ছোট বয়স থেকেই হিয়ারিং দিতে হবে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ‘ডিজিটাল হিয়ারিং এড’ কানে শোনার সব ঘাটতি দূর করতে পারে। বাচ্চাদের পাশাপাশি বেশি বয়সেও নানান কারণে শ্রবণ ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। চশমার মত হিয়ারিং এডকে জীবনের অঙ্গ করে নিতে পারলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় অনায়াসে। কোলাহল মুখর জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবেন না।”

