আমাদের ভারত,৯ সেপ্টেম্বর: একেবারে একই ঘটনা। একই দৃশ্য। কেবল পাল্টে যাচ্ছে সময় আর দেশ। শ্রীলংকা তারপর বাংলাদেশ এবার নেপাল। গণঅভ্যুত্থান কলম্বো, ঢাকা ও কাঠমান্ডুতে। বাংলাদেশের মত বিক্ষোভে সামনের সারিতে যুবসমাজ অর্থাৎ জেন-জি। তাই নেপালের এই পালাবদল শ্রীলঙ্কা- বাংলাদেশের রিপিট টেলিকাস্ট বললে ভুল বলা হবে না। মাত্র ৪ বছরে ভারতের তিন প্রতিবেশী দেশে এক পদ্ধতিতে গণবিদ্রোহ ও গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পালা বদলের পরিস্থিতি তৈরি হলো।
ভারতের প্রতিবেশী তিন দেশ শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও নেপালে প্রবল জনরোষ থেকে গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় পরপর সব চিত্র মিলে যাচ্ছে। ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়াকে সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠে নেপালের জেন জি। সোমবার থেকে অলি সরকারের বিরোধিতায় নামে জেনজি। বিদ্রোহীদের দমনে গুলি চলেছে, প্রাণহানি হয়েছে। মঙ্গলবার এই বিদ্রোহ হিংসাত্মক চেহারা নেয়। এই গণ আন্দোলন মোকাবিলায় ব্যার্থ প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ করে ও পালাতে বাধ্য হন। প্রধানমন্ত্রীকে সামরিক বিমানে সরানো হয়। আলির বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতি, উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রীদের বাড়িতে ঢুকে অবাধ লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশেও
২০২২- এ শ্রীলঙ্কায় এই একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। তীব্র মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি, এই সব কারণে একাধিক সংকট দেখা যায় শ্রীলঙ্কায়। তার বিরোধিতায় গণঅভ্যুত্থান হয়, তুমুল বিক্ষোভে উত্তাল হয় দীপরাষ্ট্র। রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবনে ঢুকে লুট, ভাঙ্গচুর করে বিক্ষোভকারীরা। সুইমিংপুলে নেমে স্নান করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। পালিয়ে বাঁচেন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
এরপর ২০২৪ থেকে এখনো পর্যন্ত জ্বলছে বাংলাদেশ। জুলাই বিপ্লবের আঁচে পড়ে হাসিনা সরকার। মূলত ছাত্র আন্দোলনকে সামনে রেখে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারায় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ সরকার। আন্দোলনের নেপথ্যে মূল কারণ ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা। শেখ হাসিনার পতনের পর তার বাড়িতে ঢুকে লুটপাট করেন বাংলাদেশিরা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর খাটে শুয়ে ছবি, ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখান থেকে টিভি, হাঁস- মুরগি, জামা- কাপড় সহ বহু জিনিস নিয়ে পালান নাগরিকরা। অনেককে অশ্লীল আচরণ করতেও দেখা যায় সেখানে।
এবার ২০২৫- এর সেপ্টেম্বর। সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধকরণকে সামনে রেখে তুমুল বিক্ষোভ দেখা যায় নেপালজুড়ে। বিক্ষোভকারীরা বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্ম। সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন তারা। সেখানে ভাঙ্গচুর চালান আন্দোলনকারীরা। এমনকি আগুনে ধরিয়ে দেওয়া হয়। চাপে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সরকার। ততক্ষণে বিদ্রোহের আগুন তীব্র হয়ে গেছে। রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে নেপাল। দুর্নীতি সহ একাধিক অভিযোগে অলি সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল অশান্তি দেখা যায়।
যেভাবে শ্রীলংকা, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের বাড়িতে হামলা হয়েছিল ঠিক একই দৃশ্য দেখা যায় নেপালেও। রাস্তায় ফেলে মারা হয় দেশের অর্থমন্ত্রীকে। সেনার চপারে করে দেশ ছাড়েন অলি বলে শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি সীমান্ত পেরতে পেরেছেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।
যেভাবে হাসিনার পতনের পর বঙ্গবন্ধু সহ আওয়ামি লিগের নেতা- নেত্রী এবং মজিবুর রহমানের মূর্তি, প্রতিচ্ছবি ভাঙ্গা হয়েছে দেশজুড়ে নেপালেও আজ সেই ছবি দেখা গেল। রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টির প্রেসিডেন্ট রবি লামিছানাকে জেল থেকে মুক্ত করা হয়। ঠিক যেমন বিএনপি নেতৃত্বকে বাংলাদেশের কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
সোমবারেই আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছিলেন, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের মতো নেপালে গণঅভ্যুত্থান হতে পারে। মঙ্গলবার সেই আশঙ্কা সত্যি হয়ে গেল। এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা ওই পরিস্থিতি থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারলেও বাংলাদেশে এখনো আগুন জ্বলছে। এখনো সেখানে সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত। ইউনুস সরকার দেশে সম্পূর্ণভাবে শান্তি আনতে পারেনি। ফলে নেপালের সেনাবাহিনী, বিরোধী রাজনৈতিক দল কিভাবে এখন পরিস্থিতি সামলায় সেদিকে নজর ভারত সহ বিশ্বের রাজনৈতিক মহলের।