আমাদের ভারত, ২৩ এপ্রিল: প্রত্যেকটা রক্তবিন্দুর হিসেব হবে। পেহেলগাঁওয়ের নৃশংস হত্যালীলার কড়া জবাব দেবে মোদী সরকার, বলে হুঙ্কার দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা তথা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তরের আধিকারিক মণীশরঞ্জন মিশ্র পরিবারের সঙ্গে ভূ- স্বর্গে বেড়াতে গিয়ে জঙ্গি হামলায় মারা যান। তাঁর বাড়িতে তার বাবা- মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান সুকান্ত মজুমদার।
পেহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগ হিন্দু। ধর্মীয় পরিচয় জেনে জঙ্গিরা গুলি চালিয়েছে বলে জানাগেছে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘এটি একটি
মর্মান্তিক ঘটনা। গোটা ভারতবর্ষ শুধু নয়, পৃথিবী স্তম্ভিত হয়ে গেছে এই ঘটনায়। সন্ত্রাসবাদের কোন রূপ এটা? যেখানে ধর্ম জিজ্ঞাস করে করে, প্রয়োজনে প্যান্ট খুলে মানুষের ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করে তারপর গুলি করা হয়েছে। কলমা পড়তে বলা হয়েছে। অদ্ভুত ধরনের নৃশংসতা আমরা দেখতে পাচ্ছি।” তিনি বলেন, “আমি মনে করি গোটা দেশে এই নিয়ে প্রতিবাদ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেন, “আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চেনেন আমিও চিনি। প্রত্যেকটা রক্তবিন্দুর হিসেব হবে।”
এরপরই তিনি জঙ্গি হামলায় নিহত মণীশরঞ্জন মিশ্রর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গ তিনজন সুপুত্রকে হারিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম পুরুলিয়ার ঝালদার মণীশরঞ্জনবাবু।পাড়া-প্রতিবেশী, স্থানীয়রা সবাই বলছেন খুব ভালো একজন মানুষ ছিলেন। তাঁকে নৃশংস ভাবে যে হত্যা করা হয়েছে এটা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, এই ঘটনায় মণীশবাবুর
পরিবার শোকোস্তব্ধ। বাবা- মা তার স্নেহের সন্তান হারিয়েছেন। পরিবারের তিন ছেলেই সরকারি চাকরি করেন। পড়াশোনায় সবাই ভালো। মণীশবাবু তো কেন্দ্রীয় সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করতেন। ফলে তার চলে যাওয়া আমাদের দেশের ক্ষতি।
এদিকে জঙ্গি হামলার ঘটনায় মোদীর সমালোচনা করে ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ৫৬ ইঞ্চির ছাতি কোথায় গেল? এর পাল্টায় সুকান্ত মজুমদার বলেন, এই বিষয় নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। তবু ফিরহাদ হাকিমকে বলব, আপনার দু’জন ভাইয়ের হুর প্রাপ্তি হয়েছে। আর বাদবাকি যে ভাইয়েরা আছে, সবার হুর প্রাপ্তি হবে।
এই ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে, এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, ওখানে রাজ্য সরকার আছে। ওখানে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলছেন? আমরা একবারও বলিনি ওখানে রাজ্য সরকার তাড়াতাড়ি ভোট করিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ওখানে ভোট হয়েছে। আমরা সেটা মেনে নিয়েছি। সেখানে তাড়াতাড়ি ভোট না হলে পুরোদমে কেন্দ্রীয় শাসন থাকতো। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে বলেই আমরা মেনেছি। তিনি বলেন, দায় সবার।
মোদী সরকারের আমলে পুলওয়ামা হয়েছে, এবার পেহেলগাঁও হামলা। তাতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দাবি করেন, এর আগের সরকারের আমলে হামলার সংখ্যার তুলনায় মোদী সরকারের আমলে হামলার সংখ্যা কম না হলে আমরা সরকার ছেড়ে দেব।
একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, কড়া পদক্ষেপ হবেই। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিদেশ সফর ছেড়ে চলে এসেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওখানে গিয়ে বসে রয়েছেন। কাউকে ছাড়া হবে না। সময় হলে বোঝা যাবে কী হতে চলেছে।
অন্যদিকে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে সুকান্তবাবু বলেন, কাশ্মীরের নিরাপত্তা নিয়ে সবসময় প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর দাবি, ভারতবর্ষের যেখানে যেখানে ডেমোগ্রাফি বা জনবিন্যাসের পরিবর্তন হয়েছে সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেবল কাশ্মীর কেন, কাল মালদায় অমৃতি নামে একটি গ্রামে নৃশংস ভাবে গলা কেটে খুন করা হয়েছে হিন্দু এক যুবককে। আরেকজন আহত। কারণ গত কয়েকদিন ধরে অমৃতি গ্রামে শুধু হিন্দু বাড়িগুলিতে চুরি হচ্ছিল। গ্রামের লোক সবাই মিলে রাত পাহারার ব্যবস্থা করে। এই মৃত্যুর জন্য কাকে দায়ী করবেন? গলা কেটে মারা হয়েছে। যেভাবে বকরি জবাই করা হয় সেভাবে মানুষকে জবাই করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি একজন মারা গেছে। হিন্দুদের টার্গেট করে মারা হয়েছে। শুধু কাশ্মীর নয়, মুর্শিদাবাদে হয়েছে, মালদাতেও হয়েছে। তাঁর কথায়, কাশ্মীর এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি না। ওখানে তো বন্দুক নিয়ে উগ্রপন্থীরা মেরেছে। এখানে কারা মারল? ধর্মের নামে মানুষ খুন করার এই যে তত্ত্ব, সেই ধর্মের সবাইকে রিজেক্ট করা উচিত।