৬০০ বছরের প্রাচীন নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় আজও ব্রাত্য মহিলারা, মুড়কির মোয়া বলি এই পুজোর বৈশিষ্ট্য

পার্থ খাঁড়, আমাদের ভারত, ২৩ সেপ্টেম্বর: নাড়াজোল রাজবাড়ির ৬০০ বছরের প্রাচীন দুর্গা পুজোতে পুজো থেকে ব্রাত্য মহিলারা। পর্যটকদের জন্য এবছর থাকছে থাকার ব্যবস্থা। মায়ের পুজোতে মায়েরাই ব্রাত্য এমনটাই চলে আসছে ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর এটাই প্রথা। আর সেই প্রথা আজও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন রাজ পরিবারের মহিলারা।

রাজ পরিবার সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান রাজার নায়েব ছিলেন উদয়নারায়ণ ঘোষ। তিনি রাজার অনুমতি নিয়ে মেদিনীপুর জেলায় শিকার করতে এসেছিলেন। দাসপুরের নাড়াজোল জঙ্গলে শিকার করে ফেরার পথে হঠাৎই দেখেন একটি বক তাড়া করছে বাজপাখিকে। এই দৃশ্য দেখে চমকে গিয়েছিলেন নায়েব মশাই। বাড়ি ফিরে সেই রাতেই তিনি স্বপ্ন দেখেন ওই জঙ্গলেই রয়েছেন মা দুর্গার অষ্টধাতুর মূর্তি।

মায়ের নির্দেশে সেই মূর্তি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। নাড়াজোল এলাকার জঙ্গল সাফাই করে তৈরি করেন বাড়ি এই বাড়িতেই অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি পুজো শুরু করেন বাংলার ৮২০ বঙ্গাব্দে।পরবর্তীকালে উদয় নারায়ণ ঘোষ নাড়াজোল রাজ বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন। দুর্গাপুজোর যাবতীয় বিধি নিষেধ তিনি চালু করেন। আজ নাড়াজোল রাজবাড়ি ধ্বংসের পথে। কিন্তু প্রথা মেনে আজও রাজবাড়িতে অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি পূজিত হন। রাজবাড়িতে বৈষ্ণব মতে পূজিত হন মা দুর্গা। পাশাপাশি এখানে রীতি মেনে চিরাচরিত কাল থেকে হয়ে আসছে মোয়াবলি। আজও রাজবাড়ির মহিলারা পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারেন না। নিতে পারবেন না প্রসাদ ও বেলপাতাও। রাজবাড়ির অষ্টধাতুর মূর্তিতে মা একাই পূজিত হন। এখানে মায়ের সাথে থাকে না কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী। এখানে যেহেতু অষ্টধাতুর দুর্গা তাই বিসর্জন হয় না। শুধুমাত্র ঘট ডুবিয়ে নিরঞ্জন দেওয়া হয়।

দু’বছর করোনার জেরে সেভাবে পুজোর আয়োজন হয়নি। তবে এবছর রীতিনীতি মেনে সাড়ম্বরে পালিত হবে দুর্গা পুজো। তার জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানান রাজবাড়ির সদস্যরা। এবছর দুর্গা পুজোয় পর্যটকদের জন্য রাজবাড়িতে থেকে পুজো দেখার সুযোগ ও পাশাপাশি প্রসাদ গ্রহণের ব্যবস্থ থাকছে। পর্যটকরা পুজোর কদিন রাজবাড়িতে এসে রাজকীয় খাবার দাবার সহ পুজো দেখা ও রাজবাড়ির ইতিহাস ঘুরে দেখতে পারবেন এমনটাই জানান রাজবাড়ির বর্তমান সদস্যরা। দাসপুর ছাড়াও দূরদূরান্তের বহু মানুষ পুজোয় ভিড় জমান নাড়াজোল রাজবাড়িতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *