গাছ কেটে রাস্তা চওড়া হলেও চারা লাগানো হয়নি, অভিযোগ পরিবেশবিদদের

আমাদের ভারত, ১৮ ফেব্রুয়ারি: যানবাহনের গতি বাড়াতে ও যানজট কমাতে রাস্তা চওড়া করা হয়েছে। আর সেই রাস্তা চওড়া করতে গিয়েই কাটা পড়েছে হাজার হাজার গাছ। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ চারা লাগানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে পরিবেশবিদদের মধ্যে।

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দুইধারেই দু’দশক আগেও ছিল সবুজে ঘেরা। রাস্তার দু’পাশে ছিল প্রাচীন বহু গাছ। চৈত্র-বৈশাখের প্রখর রোদের মধ্যেও এ পথ ছিল যাতায়াতের পক্ষে আরামদায়ক। তাপমাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকত এই রাস্তায়। চোখেরও আরাম হত যাত্রীদের। বিকেল হতেই শোনা যেত পাখিদের কিচিরমিচির। কিন্তু এখন সেই ছবিটাই আমূল বদলে গিয়েছে।

যশোর রোডে গাছ কাটা নিয়ে মামলার সময়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে গাছ কাটার প্রসঙ্গ আদালতে তোলা হয়েছিল। সরকার বিকল্প বনসৃজনের জন্য কী ব্যবস্থা করেছে, তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সে সময়ে দেখা যায়, সরকার যে জমিতে গাছ লাগানোর কথা বলেছে, সে জমির কোথাও আছে পাকাবাড়ি, কোথাও চাষের জমি, কোথাও জলা জমি। তাই সেই সব সরিয়ে গাছ আজও লাগানো হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, যে গাছগুলি কাটা পড়েছে, সেগুলি সবই প্রাচীন গাছ। তাদের কোনওটার বয়স ১০০ বছর, কোনটার ১৫০ বছর, কোনওটার ২০০ বছর।

গাছ কাটা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যে মামলা হয়েছিল সেখানে রাজ্য সরকার হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, বারাসত থেকে বহরমপুর পর্যন্ত ১৯,৭৭৫টি গাছ কাটা হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগের বয়স ১৫০ বছর পেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, গাছ লাগানো নিয়ে হয়েছে সমস্যা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এখন রাস্তা চওড়া হওয়ায় প্রচুর গাড়ি বেড়েছে। ফলে দূষণ ছড়াচ্ছে। ধোঁয়ার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় চাষবাসে। বেড়েছে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও।

তাহলে এই ছবি কী বদলাবে না? স্থানীয় বাসিন্দারাই সে ভাবে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। কেননা তাঁদের দাবি, গাছ লাগানোর জন্য রাজ্য সরকার এখনও জমিই তৈরি করতে পারেনি। সরকার পরিবেশ বাঁচাতে গাছ লাগানোর কথা বলে। প্রচার করে। অথচ, নিজেরাই সেই কাজটা করে না। মঞ্চ বেঁধে গাছ বিলি করা হয়। পরিবেশ মেলা হয়। সেখান থেকেও গাছ বিতরণ করেন মন্ত্রীরা, অথচ কাজের কাজ কিছুই হয় না। রাস্তার ধারে যে সব মানুষের জমিজমা আছে, তাঁদের নিজেদের উদ্যোগেই গাছ লাগানো উচিত এখন।

এই অপরিকল্পিত গাছ কাটা রুখতে লাগাতার প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন পরিবেশবিদ সমীর বোস। সামাজিক মাধ্যমে ‘স্ট্যান্ড ফর গ্রিন কলকাতা’ হ্যাশট্যাগে কখনও লিখেছেন, “একটা ভাবনা। এই প্রয়াসের মূলকথা হ’ল কলকাতা আমার আপনার সব কলকাতাবাসীর এবং তার গাছগুলিও তাদের আপনজন এদের সংখ্যা বাড়িয়ে শহর আরও সবুজ হোক নির্মল হোক।“ কখনও বড় হরফে ফেসবুক ওয়ালে বারাসত ব্যারাকপুর রোডে কোথাও কাউকে গাছ কাটতে দেখলে ‘এখানে জানান’ বলে আবেদন করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, “এই অকারণ গাছকাটা যজ্ঞ বন্ধ করা যায় কি? এই উন্নয়ন কার জন্য? মানুষই যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমীরবাবু দাবি তুলেছেন, আইনি নির্দেশ মেনে দ্রুত গাছ লাগিয়ে সেগুলো বড় করার উপযুক্ত পরিচর্যার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *