মোদীর সভার এক বছর পরেও ক্ষতিপূরণ মেলেনি দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষকদের, ক্ষোভে ফুঁসছেন নারায়ণপুরের বাসিন্দারা

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৬ আগস্ট: মোদীর সভায় বঙ্গে বিজেপির ঝুলি ভরলেও দীর্ঘ এক বছর পরেও ফসলি জমির ক্ষতিপূরণ পাননি দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষকেরা। বুনিয়াদপুরের নারায়ণপুরে নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী সভা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর ওই সভার জন্য কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া জমির ক্ষতিপূরণের কথা বলা হলেও দীর্ঘ এক বছর পরেও তার কিছুই পাননি বলে অভিযোগ কৃষকদের।

যদিও স্থানীয় বিজেপি নেতা ফণি ভূষণ মাহাতো জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থল সহ হেলিপ্যাড তৈরীর জায়গায় যেসব কৃষকদের ক্ষতি হয়েছিল তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তবে সভাস্থলে আসতে দূরের বেশকিছু জমিতে যে ফসলের ক্ষতি হয়েছিল তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ জেলায় আসলেও জেলা থেকে তা বরাদ্দ না হওয়ায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই মিটিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে জোর টেক্কা দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সভাকেই হাতিয়ার করেছিল বঙ্গ বিজেপি। ২০১৯ সালে সেই সূত্র ধরেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুরের নারায়ণপুর মাঠে বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে প্রকাশ্য জন সভায় যোগ দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। মোদীর সভার গুরুত্ব বুঝে আগেভাগেই স্থানীয় নেতৃত্বরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। যার কারণে সভাস্থলের জমি দেওয়া নিয়ে কৃষকদের কোনও অসুবিধাই সামনে আসেনি। কিন্তু সভায় মোদির আগমন ঘটতেই সমস্ত হিসেব উল্টে গিয়েছিল জেলা বিজেপি নেতৃত্বদের। মাঠ ভেঙে হাজার হাজার মানুষের ছুটে আসাতেই সভা স্থলের আশপাশের বহু কৃষকের আবাদি জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যা নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ওই সভায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। আট থেকে আশি সকলেই সভায় ঢুকবার কোনও রাস্তা না পেয়ে জমির ফসল নষ্ট করে মোদীর সভায় যোগ দিয়েছিলেন। যার ক্ষতিপূরণ হিসেবে অবশ্য আর্থিক সাহায্যের কথা বলেছিলেন স্থানীয় নেতৃত্বরা। একইভাবে সভাস্থল সহ হেলিপ্যাড তৈরির জায়গায় যে ক্ষতি হয়েছিল তার জন্যও কৃষকদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্বরা। কিন্তু ঘটনার এক বছর কেটে গেলেও কোনও সাহায্যই পাননি তারা।

বিজেপি সূত্রের খবর, ২০১৯ এ মোদির সভার পরেই কৃষকদের ক্ষতিপূরণের জন্য রাজ্য থেকে তড়িঘড়ি অর্থ পাঠানো হয়েছিল জেলায়। কিন্তু তৎকালীন জেলা নেতৃত্বদের সদিচ্ছার অভাবে নিজেদের প্রাপ্য থেকে আজো বঞ্চিত রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা। আর যাকে ঘিরেই ক্ষোভে ফুঁসছেন নারায়ণপুরের বাসিন্দারা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোজাহার আলী, কাসেম আলী, রফিকুল ইসলাম, আশরাফ আলী এবং লিয়াকত আলীরা জানিয়েছেন, তাদের মত অনেক কৃষকের জমি নেওয়া হয়েছিল মোদীর সভার জন্য। তখন ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছিল, যার ফলে জমি দিতে রাজি হয়েছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু ওই সভায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয় এলাকার কৃষকরা। বছর কেটে গেলেও কোনো ক্ষতিপূরণ তারা পাননি।

যদিও এমন ঘটনা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তৎকালীন জেলা বিজেপি সভাপতি শুভেন্দু সরকার। বর্তমান সভাপতি বিনয় বর্মন অবশ্য পুর্বতন সভাপতির উপর দায়ভার চাপিয়ে বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, রাজ্য থেকে ক্ষতিপুরনের অর্থ এলেও কেন বন্টন করা হয়নি তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দাস জানিয়েছেন, তিনিও বিষয়টি শুনেছেন। যদি দলীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করার দরকার হয় তাহলে অবশ্যই দেখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *