Scientist, KMDA, কেএমডিএ-কে সতর্ক হওয়ার নিদান, ৭-দফা দাবি পরিবেশ বিজ্ঞানীর

আমাদের ভারত, ১৫ জুন: রবীন্দ্র সরোবরে কিশোরের ডুবে মৃত‍্যুর পর অন্তত কেএমডিএ-কে সতর্ক হওয়ার নিদান দিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং রবীন্দ্র সরোবর বাঁচাও কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ।

তিনি জানান, “একটা সরোবরে যে কেউ এসে জলে নেমে যাচ্ছে, কোনো বিধিনিষেধ মানার ব‍্যাবস্থা নেই। কর্তৃপক্ষের নড়েচড়ে বসার সময় হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এই রকম দুর্ঘটনা না ঘটে সেটা দেখার।

এই সঙ্গে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “রবীন্দ্র সরোবর পাবলিক সুইমিং পুলে নিম্নোক্ত সংস্কার না করলে এই রকম দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে:
১) রবীন্দ্র সরোবরে কোনো লাইফ সেভার বর্তমাণে নেই। অবিলম্বে লাইফ সেভার নিয়োগ করতে হবে ;
২) রবীন্দ্র সরোবরের দীর্ঘকাল কোনও সংস্কার হয় না। অবিলম্বে সংস্কারের কাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে;
৩) যে কেউ এসে সরোবরের জলে নামতে পারবে না। জলে নামার জন‍্য অতি আবশ‍্যিক কিছু নিয়মাবলী পালন করতে হবে। যাঁরা জলে সাঁতার কাটতে নামবেন, তাঁদের রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন। তা না হলে যে কেউ জলে নেমে যাবে এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাবে।
৪) সিকিউরিটি ব‍্যাবস্থা জোরদার করতে হবে। নিরাপত্তারক্ষীরা যে কাউকে ঢুকতে দেবেন না। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সাহায্যে বিধিনিষেধ কায়েম করতে হবে।
৫) সরোবর চত্বরের ক্লাবগুলোকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। জলাশয়ের নিকটবর্তী অংশ পরিষ্কার রাখতে হবে, সরোবরের জল টেনে নেওয়া যাবে না এবং জলাশয়ে বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করা যাবে না।
৬) আমরা যাঁরা নিয়মিত রবীন্দ্র সরোবর পাবলিক সুইমিং পুলে সাঁতার কাটি তাঁরা জল পরিষ্কার রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করি যাতে জলাশয়ে ঝাঁঝি এবং কচুরিপানা জমতে না পারে। বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে আসছি। অনেকবার আমরা রবীন্দ্র সরোবর পুলের জলের গুণগত মাণ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পেশ করেছি।

কেএমডিএ-এর মৌখিক সুপারিশ অনুযায়ী আমরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগ থেকে সরোবরের জলের pH, মোট দ্রাব‍্য পদার্থ এবং ‘ই কলিফর্ম’ পরীক্ষা করতে পাঠাই। এই পরীক্ষার ফলাফল থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে জল কতটা স্নানের পক্ষে অনুপযুক্ত।

এর ফলে নিয়মিত এই সরোবরে সাঁতার কাটেন যাঁরা, তাঁদের চামরার বা চোখের অসুখ, এমনকি সেলুলাইটিস পর্যন্ত হয়েছ। এসব আমরা কেএমডিএ-কে জানিয়েছি। জলে pH এর মান ৮.২২। অর্থাৎ জল মাত্রাতিরিক্ত ক্ষারীয়। সাধারণত pH এর মাণ ৭.৪ থেকে ৭.৮ পর্যন্ত থাকে।

Total Dissolved Solid (TDS) বা মোট দ্রাব‍্য পদার্থের পরিমাণ প্রতি লিটার জলে ২৩৫ মিলিগ্রাম বা ২৩৫ পার্টস পার মিলিয়ন (ppm)। সাঁতার কাটার জলে মোট দ্রাব‍্য পদার্থের পরিমাণ ৮০ থেকে ১২০ ppm এর বেশি থাকা উচিৎ নয়। এর ফলে দীর্ঘকাল এই জলে নানা রকমের রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পুলের জলে ক্লোরিনের মাত্রা কম হওয়ায় নানারকমের জীবাণুর প্রভাবে জল দূষিত হয়। এর পরেও কর্তৃপক্ষ তেমনভাবে জল পরিশোধনের কাজ করেনি। জল দূষণ ক্রমে বেড়ে চলেছে।

৭) প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব‍্যক্তিরাই কেবল মাত্র জলাশয়ে সাঁতার না জানা ব‍্যাক্তিকে প্রশিক্ষণ দিতে পারবে।

আমি ব‍্যাক্তিগত ভাবে মনে করি, এদিনে জলে ডুবে মৃত্যুর পর বিষয়গুলোতে কর্তৃপক্ষ আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *