আমাদের ভারত, ৭ ডিসেম্বর: আদালত অবমাননা করে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন পরিবেশবিদ ও রবীন্দ্র সরোবরের প্রাতভ্রমণকারীদের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা জনসচেতনতা আন্দোলনে নেমেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, “এসবে কার স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে তা বাংলার মানুষ জানতে চায়।”
পরিবেশবিদ সমীর বোসের অভিযোগ, “২০১২ সালে দুর্গা কার্নিভাল শুরু হয় রাজ্যে। যে যে ক্লাব তখন অংশ নিয়েছিল তাদের খুশি করতে এবার বলে দেওয়া হয় তাদের প্রতিমা আর্ট গ্যালারি তৈরি করে সংরক্ষণ করা হবে।দূরদৃষ্টির অভাব বলতেই হয়। কারণ কার্নিভাল তো এক বছরেই শেষ হবে না, চলতেই থাকবে।
এবার দরকার পড়ল জমির। আর কোথাও জমি খুঁজে পেল না সরকার। রবীন্দ্রসরোবর, যা কিনা একটি জাতীয় সরোবর এবং একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্র, তার সর্বনাশ করে তৈরি করল একটি ভবন। নাম দেওয়া হল ‘ মা ফিরে এল!’ একবারও কোন পরিবেশের মানুষের পরামর্শের ধার ধারেনি সরকার।
পরিবেশবিদ সুমিতা ব্যানার্জি জানান, মামলা করা হল ‘লেক লাভার্স ফোরাম’-এর তরফে জাতীয় পরিবেশ আদালতে। ২০১৭ সালে রায় বেরলো আগামী সময়ে আর কোনও রকম সামাজিক কার্যকলাপ তদুপরি কোনওরকম স্থায়ী বা অস্থায়ী নির্মাণ করা যাবে না এই সরোবরের চৌহদ্দিতে। সরোবরে আগে থেকেই যে সমস্ত ক্লাব অবস্থিত তারাও এই আদেশ ও পর্যবেক্ষণের আওতায় চলে এল।
এই অভিযোগের মান্যতা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সবুজ মঞ্চ’-র এক সক্রিয় কর্মী বলেন, “এবার যেটা হলো একটি অবাস্তব কল্পনাকে রূপ দিতে সমস্ত দুর্গা প্রতিমা জমা হতে থাকল। তারা জীর্ণ হয়ে ভগ্নস্তূপে পরিণত হল।অর্থাৎ এককথায় পরিবেশ ধ্বংস করে কারোর ইচ্ছের দাম দিতে সাধারণ মানুষের এবং অন্যান্য জীব, পরিযায়ী পাখি, কীটপতঙ্গের ব্যাপক ক্ষতি করা হল।”
পরিবেশবিদ সোমেন্দ্রনাথ ঘোষের মতে, “সব থেকে আশঙ্কার যেটা, এই গ্যালারি জলাশয় থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে। এ পর্যন্ত মেনে নেওয়া গেলেও গত মাসে হঠাৎ ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গায়ের জোর খাটিয়ে প্রচুর ট্রাক সরোবরে ঢুকে টন টন বালি, সিমেন্ট, পাথর, লোহার শিক সরোবর থেকে মাত্র পঞ্চাশ মিটার দূরে জমা করলো। যন্ত্রের ঘর্ঘর আওয়াজে মানুষ জানতে পারল যে মাটি খুঁড়ে নীচে কংক্রিটের ব্যবস্থা পাকা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করে জানা যাচ্ছে আর্ট গ্যালারির পাশে আর একটি ভবন হচ্ছে। যারা প্রত্যক্ষদর্শী তারা অভিযোগ জানায় সরোবর কর্তৃপক্ষকে।তারা কোনও কর্ণপাত করলেন না।
সমীরবাবুর বক্তব্য, ঘটনার দুটো দিক রয়েছে। এক জাতীয় আদালতের অবমাননা এবং দুই ব্যাপক জলদূষণ, বায়ু ও শব্দদূষণ। যার ফলে যে গুটিকতক পরিযায়ী পাখিদের দল সরোবরে আস্তানা করেছিল তারাও সরোবর ত্যাগ করতে শুরু করল। কারণ জলে সিমেন্ট বালি পাথরের গুঁড়োর পরিমাণ বাড়ছে।”
সব মিলিয়ে রবীন্দ্র সরোবর অঞ্চলের পরিবেশবাদীরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের প্রশ্ন, এভাবে যদি ধীরে ধীরে দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুসকে মেরে ফেলা হয়, তার দায় কার?