সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ২৯ মে: বাবা-মাকে হত্যার পর, বনগাঁর এক মাদ্রাসায় ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একের পর এক ব্যক্তিকে কোপানোর গুরুতর অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় অন্তত চার জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবককে আটক করেছে বনগাঁ থানার পুলিশ। এটি কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয় বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ থানার অন্তর্গত বনগাঁ হাফিজিয়া খারিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মাদ্রাসায় আজানের পর শিক্ষাদানের কাজ চলছিল। সেই সময়ে আচমকা ওই ব্যক্তি মাদ্রাসার মধ্যে ঢুকে উপস্থিত শিক্ষক ও মাদ্রাসার পরিচালকদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বনগাঁর পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম হুমায়ুন কবির ওরফে আসিফ। ৩৫ বছরের ওই যুবকের বাড়ি বর্ধমানের মেমারির মোক্তারপাড়ায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বাড়িতেই বাবা-মাকে হত্যা করেছিল সে। তারপর মেমারি থেকে বনগাঁয় এসে মাদ্রাসায় তান্ডব চালায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল পুলিশ। অভিযুক্ত হুমায়ুন কবিরকে আটক করে বনগাঁ পুলিশ। কিন্তু ততক্ষণে এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় এলাকায়। উত্তাল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। মাদ্রাসার সামনেই অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশের হাত থেকে অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। এই নিয়ে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে গিয়ে আহত হন খোদ বনগাঁ থানার আইসি শিবু ঘোষ। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে বনগাঁ পুলিশ জেলা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। পরবর্তী সময়ে উত্তেজিত জনতা এসে জড়ো হয় বনগাঁ থানার সামনে। শুরু হয় থানা ভাঙ্গচুর। পুলিশও পাল্টা লাঠি চার্জ করে। থানা ভাঙ্গচুরে জড়িত বেশ কয়েকজনকে আটকও করেছে পুলিশ।
তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনও ভাবেই সাম্প্রদায়িক অশান্তি না ছড়ায়, তার জন্য পরিস্থিতি একটু শান্ত হতেই পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার স্পষ্ট ভাষায় জানান, এটি কোনও সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই ঘটনা নিয়ে যাতে কোনও রকম গুজব না ছড়ায়, তার জন্য সচেতনতা প্রচার চালানো হচ্ছে পুলিশের তরফে। আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং আটক হওয়া বাকিদের বৃহস্পতিবার আদালতে পেশ করা হবে। সোস্যাল মিডিয়ায় বনগাঁ পুলিশ দাবি করেছে, ধৃত হুমায়ুন কবির মানসিক ভাবে সুস্থ নয়। এদিকে তদন্তে সহায়তার জন্য এ দিন রাতেই মেমারি থেকে বনগাঁর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন মেমারি থানার পুলিশ।