সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১২ মার্চ: ফের হাতির মৃত্যুতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল বাঁকুড়া সদর থানার বেলবনি-চূয়াগাড়া গ্রাম সহ সন্নিহিত এলাকায়।গত ৭ ফেব্রুয়ারি উত্তর বাঁকুড়ার বেলবনি বিটের পিথরাগোড়া গ্ৰামে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির মৃত্যুর ঘটনার সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই ফের বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে হাতির মৃত্যু হল বাঁকুড়ায়।
আজ সকালে জেলার উত্তর বন বিভাগের বাঁকুড়া রেঞ্জের চুঁয়াগাড়া গ্রাম সংলগ্ন সম্মিলনী বিদ্যাপীঠের পিছনে একটি গম ক্ষেতে পূর্ণবয়স্ক দাঁতালটিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় অধিবাসীরা। তারাই বন দফতরে খবর দেয়।
ঘটনাস্থলে আসেন এডিএফও বি.কে ঝাঁ। তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে হাতিটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মারা গেছে। কিন্তু যে উচ্চতায় বিদ্যুৎবাহী হাইটেনশন লাইন গেছে তাতে হাতি শুঁড় দিয়ে তা নাগাল পাবে না। আমরা যে প্রাথমিক তদন্ত করেছি তাতে দেখা গেছে একটি বিশাল এলাকাজুড় গম চাষ করা হয়েছে। স্যালো পাম্পের মাধ্যমে জল তুলে সেচের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জল সেচের ওই পাম্পে হুকিং করে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই পাম্পের বিদ্যুৎ নিয়ে গম ক্ষেতের চারিদিকে জিআই তার দিয়ে বেড়া লাগিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়েছে। সেই তারে হাতিটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মারা গেছে। তবুও ময়নাতদন্তের পরই আমরা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পারব। তিনি বলেন, ওই গম ক্ষেতে স্থানীয় একটি আশ্রমের এক মহারাজ বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া দিয়ে রেখেছিলেন। তদন্তে যদি উঠে আসে যে সংশ্লিষ্ট আশ্রম কর্তৃপক্ষ বা অন্য কেউ জড়িত তাহলে তার বিরুদ্ধে বন্য প্রাণী হত্যা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, হাতির মৃত্যুর জন্য দায়ী দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা এবং হাতিদের জঙ্গলেই আটকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। বন দফতর সেখানেই আলু, কুমড়ো, কফি, কলাগাছ, ধান, চাল, গম ইত্যাদি খাবার হিসেবে সরবরাহ করুক। তাতে খরচ ও ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। হাতি বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে এবং জঙ্গল ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা পাবে। এদিকে বাসিন্দারা হাতিকে দেবতা বলে মানেন। তাই বহু মানুষ তেল সিঁদুর মাখিয়ে, শাঁখ ও উলুধ্বনী দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
এ বিষয়ে হাতি সমস্যা সমাধানের সংগঠন সংগ্রামী গণমঞ্চের জেলা সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখার্জি বলেন, মানুষের মৃত্যু যেমন আমাদের বিচলিত করে ঠিক তেমনি হাতির মৃত্যুও আমাদের কাছে সমান বেদনাদায়ক।কৃষক তার ফসল রক্ষা করবেন, হাত তার খাবাবের সন্ধানে মাঠে নামবে গ্রামে ঢুকবে। তিনিউদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাঁকুড়ায় হাতি ও মানুষের সংঘাত চরম আকার ধারন করেছে।প্রত্যেকটি গ্রামে সন্ধ্যা হলেই যুদ্ধের প্রস্তুতি।মানুষের হাতে হুলা আর অন্য দিকে ক্ষুধার্ত হাতি।এই মুহূর্তে ৬৫ টি হাতির পাল এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। এর জন্য দায়ী বন দফতরই। হাতির এবং মানুষের মৃত্যুর দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। কেন না উত্তর বাঁকুড়ার অগভীর বনভূমি। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের পর গ্রাম।সংগঠনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে হাতি গুলিকে যেখানে তারা ছিলো সেই ময়ূরঝর্ণা এলাকায় ফেরত পাঠানোর দাবি জানানো হচ্ছে ।এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের ক্ষতি পূরণ দ্বিগুণ করতে হবে এবং মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের টাকা ৪ লক্ষ নয়, ১০ লক্ষ করতে হবে এবং মৃতের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
এদিন হাতিটিকে ময়নাতদন্তের জন্য বেলিয়াতোড় বন বাংলোয় নিয়ে আসা হয় এবং সেখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গেছে।