আমাদের ভারত, ৩১ জুলাই: দুর্গাপুজো নিয়ে
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভা থেকে বড়সড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের দুর্গাপুজোতে সরকারি অনুদান হিসেবে রাজ্যের সব ক্লাব ও পুজো কমিটিগুলি পাবে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা করে। গত বছর পুজো কমিটিগুলিকে ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছিল রাজ্য। এবার সেই অনুদানের পরিমাণ ক্লাব পিছু আরো ২৫ হাজার টাকা করে বাড়ালো তৃণমূল কংগ্রেস সরকার।
কেবল আর্থিক অনুদান নয়, এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ মাশুলেও ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে ৮০ শতাংশ করা হলো। একই সঙ্গে পুজো কমিটিগুলির ফায়ার লাইসেন্স সহ অন্যান্য ফি মকুবের কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এবার ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্গা পুজো শুরু। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের পুজো কার্নিভাল হবে ৫ অক্টোবর। পুজো উদ্যোক্তাদের অনেকেই মনে করেছিলেন, এবারে হয়তো অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করা হতে পারে। কিন্তু অনুষ্ঠানের শেষ লগ্ন পর্যন্ত এই ব্যাপারে কৌতূহল ধরে রেখে মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে জানতে চান এবার কত? এরপর নিজেই খানিক দর কষাকষির স্টাইলে বলেন, ৮৫, ৯০, ১ লাখ? এর পর ঘোষণা করেন এবার অনুদান ১ লাখ ১০ হাজার।
গত বছর রাজ্যের ক্লাবগুলিকে দুর্গাপুজোর আয়োজনের জন্য বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ২০২৫ সালের দুর্গাপুজোয় চাঁদা আরো বাড়িয়ে এক লক্ষ টাকা করা হতে পারে। সেটা আরো ১০ হাজার বাড়িয়ে দেওয়ায় স্বভাবতই খুশি উদ্যোক্তারা। তবে অনেকের মতে, বছর ঘুরলেই ভোট, সম্ভবত সেই অঙ্ক কষেই অনুদানের পরিমাণ এক ধাক্কায় ২৫ হাজার টাকা বাড়ানো হলো।
এদিনের বৈঠকে পুজো কমিটিগুলির পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। সেখানেই এই ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, দুর্গাপুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাংলা সংস্কৃতি ও অর্থনীতির অঙ্গ। এই সময় শিল্প বাণিজ্যে ৪০-৪৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে এই উৎসব ঘিরে।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে ক্লাবগুলিকে অনুদান দিয়ে আসছে রাজ্য সরকার। প্রথমে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অঙ্ক বেড়েছে।করোনা পরিস্থিতিতে তা এক ধাক্কায় পৌঁছেছে ৫০ হাজারে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে সেটা দাঁড়ায় ৮৫ হাজারে। এবার সেই অঙ্ক পৌঁছালো এক লক্ষ দশ হাজারে।
তৃণমূল সমর্থকদের দাবি, রাজ্য সরকার অনুদান ঘোষণার পর থেকে পুজো ঘিরে অতীতে যে চাঁদা জুলুম দেখা যেত, তা বন্ধ হয়েছে।
একই সঙ্গে রাজ্যের অনুদানের টাকায় বিভিন্ন ক্লাব থিমের প্রতিমা ও মণ্ডপ করায় বাংলার সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। আর সেই সূত্রেই দুর্গা পুজোকে ঘিরে ইউনেস্কো থেকে সেরার শিরোপা পেয়েছে বাংলা।
তবে অতীতে এই অনুদান দেওয়া নিয়ে মামলাও গড়িয়েছিল আদালতে। যদিও আদালতে সে মামলা টেকেনি, কারণ আদালতে রাজ্য জানিয়েছিল, দুর্গাপুজোর সঙ্গে বাংলার মানুষের আবেগ ও সংস্কৃতি জড়িয়ে। অনুদান বন্ধ করে দিলে অনেক পুজো কমিটির পক্ষেই বাংলার সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
পুজোর অনুদান নিয়ে মামলা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেকে কোর্টে চলে যায়, কেউ কেউ বলে কেন ওদের সাহায্য করা হবে, আরে ভাই এটা একটা উৎসব। পুজো হয় বলে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ হয়। কই এগুলো তো বলছেন না?