টাকার অভাবে শিশুর দেহ ব্যাগে করে বাড়ি নিয়ে এলেন কালিয়াগঞ্জের অসহায় বাবা মা

স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ১৪ মে: ফের অমানবিকতার সাক্ষী রইল কালিয়াগঞ্জবাসী। টাকার অভাবে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে মৃত শিশুকে ব্যাগে করে শিলিগুড়ি থেকে কালিয়াগঞ্জে বাড়ি ফিরল মৃত শিশুর অসহায় বাবা। এই ঘটনা জানাজানি হতেই জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্রের খবর, কালিয়াগঞ্জ ব্লকের মুস্তাফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মার স্ত্রী যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিল। পাঁচ মাস পর দুই শিশু সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত রবিবার তাদের দুইজনকেই কালিয়াগঞ্জ ষ্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তাদের উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরে আসে অসীম দেবশর্মার স্ত্রী এবং চিকিৎসা চলাকালীন শনিবার রাতে মৃত্যু হয় একটি শিশুটির। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক অসীম দেবশর্মা অর্থের অভাবে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কোনও অ্যাম্বুলেন্স জোগার করতে না পারায়। মৃত ছেলেকে একটি ব্যাগে ভরে বেসরকারি বাসে করে রায়গঞ্জ পৌছন। সেখান থেকে অপর একটি বাসে চেপে কালিয়াগঞ্জে যান। ঘটনার খবর পেয়ে কালিয়াগঞ্জের বিজেপি কাউন্সিলর গৌরাঙ্গ দাস একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। সেই অ্যাম্বুলেন্সে কালিয়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাড়ি পর্যন্ত দেহ নিয়ে যাওয়া হয়।

অসীম দেবশর্মা জানিয়েছেন, “চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার যেটুকু টাকা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। মৃতদেহ নিয়ে আসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ৮ হাজার টাকা চায়। এমনিতেই চিকিৎসা বাবদ ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই বাসে করেই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছি।”

কালিয়াগঞ্জের বিজেপি কাউন্সিলর গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “এটা খুবই কষ্টদায়ক ঘটনা। খবর পেয়েই কোনও রাজনৈতিক ভাবে নয় মানবিকতার খাতিরে একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। অন্তত বাড়ি অবধি মৃত শিশুটিকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে পারে শিশুটির অসহায় বাবা।” তবে এই ঘটনায় গরিব ও অসহায় মানুষের এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রশ্ন গৌরাঙ্গবাবুর। গোটা ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকাজুড়ে।

অপরদিকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নিতাই বোশ্রু জানিয়েছেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখদায়ক। তবে পরিবারের লোকেরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিতাম।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *