Sukanta, Mamata, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি নিজেকে আইন- সংবিধান ও সেনার ঊর্ধ্বে মনে করেন? মেয়ো রোডে মঞ্চ খোলা ইস্যুতে মমতাকে পাল্টা কটাক্ষ সুকান্তর

আমাদের ভারত, ১ সেপ্টেম্বর: মেয়ো রোডে মঞ্চ খোলা নিয়ে বিজেপি সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ সেনা তৃণমূলের ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ ভেঙ্গে দেয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়েই সেখানে ছুটে গিয়ে সরব হন মমতা। যদিও সেনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে। আর এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।

সেনাবাহিনীর দাবি, তৃণমূল যে সময়ের জন্য মঞ্চের অনুমতি নিয়েছিল তা উত্তীর্ণ হয়েছে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে প্যান্ডেল রাখায় আপত্তি রয়েছে সেনার। বিবৃতিতে সেনা জানিয়েছেন, “ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে ভারতীয় সেনা ময়দান এলাকায় দু’দিনের জন্য অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়। তিন দিনের বেশি অনুষ্ঠানের জন্য ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমতি নিতে হয়। দু’দিনের জন্য অনুষ্ঠান পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। মঞ্চটি প্রায় এক মাস ধরে তৈরি করা হয়েছে। অস্থায়ী কাঠামো অপসারণের জন্য আয়োজকদের কাছে বেশ কয়েকটি অনুস্মারক পাঠানো হয়েছে, তবে এটি সরানো হয়নি। এরপর কলকাতা পুলিশকে অবহিত করা হয় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী কাঠামোটি সরিয়ে নিচ্ছে।” সেনার বিবৃতি অনুযায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা অভিযোগ সঠিক নয়।

সেনা এই বিবৃতি তুলে ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, “এই ঘটনাটি আবারও স্পষ্ট করল যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যাচার, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ভণ্ডামিতে অতুলনীয়। ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী প্রতারণায় পারদর্শী। তিনি এতটাই এগিয়ে গেছেন যে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা কেবল লজ্জাজনকই নয়, বরং তার সাংবিধানিক পদের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। মুখ্যমন্ত্রী তোষণ-চালিত, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং প্রতারণামূলক রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য, জাতির সজাগ রক্ষকদেরও লক্ষ্যবস্তু করতে দ্বিধা করেননি। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে থাকাকালীন সেনাবাহিনীকে অপমান করার সাহস দেখিয়ে তিনি প্রকাশ করেছেন যে, ক্ষমতার প্রতি তার লালসা এবং অহংকার আইন, সংবিধান এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধার ঊর্ধ্বে।”

এরপরই সুকান্তবাবু সেনার বিবৃতির কথা উল্লেখ করেছেন নিজের পোস্টে। এরপরই তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে, সংবিধানের ঊর্ধ্বে, এমনকি ভারতীয় সেনাবাহিনীরও ঊর্ধ্বে মনে করেন? নাকি তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার এবং রাজ্য প্রশাসনকে তার প্রতারণামূলক রাজনীতি এবং কর্তৃত্ববাদী ইচ্ছার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম ছাড়া আর কিছুই করতে চান না?”

প্রসঙ্গত, আজ মেয়ো রোডে আধখোলা মঞ্চের উপর উঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের মাইকের কানেকশন কেটে দিয়েছে। স্টেজ ভেঙ্গে দিয়েছে। প্যান্ডেল আর্মিকে দিয়ে খুলিয়েছে। আমার আর্মির বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ নেই, তার কারণ উই আর প্রাউড অফ আওয়ার আর্মি। কিন্তু আর্মিকে যখন বিজেপির কথায় চলতে হয় তখন দেশটা কোথায় যায় সেটা নিয়ে সন্দেহ জাগে।” তিনি আরো বলেন, এখানে গাড়ি চলাচলের কোনো অসুবিধা নেই, কোনো রাস্তা বন্ধ নেই। আমাদের কর্মসূচি শনি ও রবিবার দু’দিন করে হয়। বিভিন্ন অর্গানাইজেশন ভাষা আন্দোলন নিয়ে অনুষ্ঠান করে। তার জন্য আমাদের অনুমতি নেওয়া ছিল। আমাদের বলতে পারতো, প্রয়োজনে পুলিশকে বলতো। দরকার হলে পুলিশ আমাদের পার্টির সঙ্গে কথা বলে আমাদের প্যান্ডেল খুলে দিতে পারতো। আমরাই খুলে দিতাম। আমরা অন্য জায়গায় শিফট করতে পারতাম। কিন্তু তা না করে মহাত্মা গান্ধী, যিনি আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় নেতা, সেই মূর্তির পাদদেশে আমরা সব অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করি। তাঁর কথায়, আমি যখন আসছিলাম, তখন প্রায় ২০০-র মতো সেনা আমাকে দেখে ছুটে পালাচ্ছিল। আমি বললাম আপনারা পালাচ্ছেন কেন? আপনারা আমার বন্ধু, আমরা আপনাদের নিয়ে গর্বিত। এটা আপনাদের দোষ নয়, আপনারা বিজেপির কথায় করেছেন। দিল্লির কথায় করেছেন। দিল্লির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কথায় করেছেন, এটুকু বুদ্ধি আমাদের আছে। আমি এনাকে দোষ দিচ্ছি না। আমি বিজেপি দলটাকে দোষ দিচ্ছি। তাদের মন্ত্রীদের দোষ দিচ্ছি। ওরা যদি রাজনৈতিক দলের মঞ্চ খুলে দেওয়ার জন্য সেনাকে এইভাবে অব্যবহার করে তাহলে কি দেশে আর একটাও নিরপেক্ষ এজেন্সি বলে কিছু থাকবে?” যদিও সেনার বিবৃতি কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিন্ন দাবি করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *