চিন্ময় ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ২৭ মার্চ: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে কোন মাস্ক প্রয়োজন বুঝে উঠতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। তাই কেউ কিনছেন ‘সার্জিক্যাল থ্রি লেয়ার’ মাস্ক, তো কেউ ‘এন ৯৫’ মাস্ক। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই খোদ মুখে রুমাল বেঁধে নিজের কাজ করে চলেছেন, সেখানে সাধারণ মানুষের মাস্ক কেনার হড়োহুড়ির জেরে বাজারে শেষ হতে চলেছে অরিজিনাল ‘এন ৯৫’-মাস্কের স্টক। এই মাস্ক আবার ডাক্তার বা নার্সদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যা সাধারণ মানুষের দরকার নেই বলেই চিকিৎসক মহলের মত। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরাই এখন চিন্তিত। কারণ, ‘এন ৯৫’ মাস্ক না-হলে তাঁরা এর পর চিকিৎসাই করতে পারবেন না।
চিকিৎসরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে শুধু এরাজ্যই নয়, গোটা দেশেই ‘এন ৯৫’ মাস্কের যথেষ্ট জোগান নেই। সেটা ইতিমধ্যে শুধু সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাই নন, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও সমানভাবে অনুভব করছেন। আর এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা মনে করছেন, রোগীর চিকিৎসা না-করলে অথবা রোগীর খুব কাছে না-গেলে আর ঠিকমতো ব্যবহার করতে জানলে, সাধারণ মানুষের জন্য ‘থ্রি প্লাই সার্জিক্যাল’ মাস্ক যথেষ্ট।
চিকিৎসক অরণি দেব নন্দী জানিয়েছেন, ‘এন ৯৫ মাস্ক হল আসলে রেসপিরেটর। আইসিইউ বা ভেন্টিলেটেড পেশেন্টের কাজ করার সময় চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের এই মাস্ক দরকার। পেশেন্টের এরোসল জেনারেট হয়। খুব কাছ থেকে কাজ করার সময়, এই মাস্ক সেই সময় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্ষা করে। সেই জন্য ডাক্তারদের এই মাস্ক বিশেষভাবে দরকার। কিন্তু, সাধারণ মানুষ না-জেনে এবং আতঙ্ক থেকে এন ৯৫ মাস্ক পরছেন। কিন্তু, ঠিকভাবে পরা হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সাধারণ মানুষের শ্বাসকষ্ট হতে বাধ্য। তাই সাধারণ মানুষের কোনওভাবে এই মাস্ক দরকার নেই। কিন্তু, তার পরও সাধারণ মানুষ অযথা কেনার ফলে কোবিড-১৯ চিকিৎসার ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের এই মাস্ক জুটছে না।’ বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, অরিজিনাল ‘এন ৯৫’ মাস্কের জোগান শেষ হয়ে যাওয়ায়, সেখানে জায়গা করে নিয়েছে নকল ‘এন ৯৫’ মাস্ক। যা মোটেও চিকিৎসকদের জন্য যথেষ্ট কার্যকর নয়।
উন্নত মাস্কের প্রতি সাধারণ মানুষের এই অতিরিক্ত ঝোঁকের পাশাপাশি, নোভাল করোনা ভাইরাস আক্রান্তকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ‘থার্মাল স্ক্যানার’ ব্যবহারের বিরুদ্ধেও মুখ খুলছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই থার্মাল স্ক্যানার পরীক্ষায় শুধুমাত্র দেহের তাপমাত্রাটুকু বোঝা যায়। অর্থাৎ জ্বর থাকলে ধরা পড়বে। কিন্তু, কোবিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে আসার পরও যদি কোনও রোগীর শরীরে উপসর্গ ফুটে না-ওঠে, অর্থাৎ ইনকিউবেশন পিরিয়ডের রোগীকে থার্মাল স্ক্যানারে ধরা যায় না। তাই থার্মাল স্ক্যানারে ধরা না-পড়া মানেই যে কেউ নোভাল করোনা ভাইরাস বহনকারী নয়, একথা বলা যায় না।