আমাদের ভারত, ৮ মে:ক্রমেই এরাজ্যে ভয়াবহ হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু সাধারণ মানুষ নন চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনাভাইরাস একের পর এক আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। আর এই পরিস্থিতি রাজ্যের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের। এনিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গ ডাক্তার ফোরামের তরফে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, শীঘ্রই এমন দিন আসছে যখন আর করোনা চিকিৎসা করার মতো কেউ থাকবে না রাজ্যে।
রাজ্যে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ কোনোভাবেই নীচে নামছে না বরং তা ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমিত সংখ্যা দেড় হাজার অতিক্রম করে গেছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আক্রান্ত হয়েছেন চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীর নার্স চিকিৎসকদের মধ্যেও। আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশকর্মীরাও। হাওড়া ও কলকাতায় মিলিয়ে প্রায় ৩২ জন পুলিশকর্মী এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত।
এভাবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধাদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে চিকিৎসক ফোরামের। সংগঠনের সম্পাদক ডাক্তার কৌশিক চাকি রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১৪০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। ইতিমধ্যেই দুজন চিকিৎসক মারা গেছেন। একটা বড় অংশের ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্য কর্মী করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসায় তাদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তাহলে রাজ্যে করোনা চিকিৎসার মত আর কেউ থাকবে না। তাই চিকিৎসক-নার্স স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।
করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রাজ্যের একাধিক হাসপাতাল অন্য রোগীদের চিকিৎসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। বেশিরভাগ হাসপাতালেই ওপিডি একেবারে বন্ধ। কিন্তু এমন অনেক রোগী রয়েছে যাদের প্রতিনিয়ত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত না হলো এইসব রোগীরা এখন বিপদে পড়ছেন। সার্বিকভাবে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বড়সড় সংকট তৈরি হয়েছে। তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ডাক্তার ফোরাম।
ফোরামের তরফের চিকিৎসক-নার্স স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা পরীক্ষার কথা জানানো হয়ছে। সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে চিকিৎসক,নার্স,স্বাস্থ্যকর্মীদের বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা করানো হোক। এছাড়াও বেসরকারি ক্লিনিক গুলোতে করোনা পরীক্ষা সুলভে করানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ফোরাম।
একইসঙ্গে করোনা সংক্রমণ আটকাতে শহরের একাধিক এলাকায় কলকাতা পুরসভার কর্মীরা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বিতরণ করছে। এই পদক্ষেপ একেবারেই সঠিক নয়। অবিলম্বে এটা বন্ধ করার কথাও জানিয়েছে ডাক্তার ফোরাম। তারা বলেছে এই ওষুধের যথেষ্ট পার্শপ্রতিক্রিয়া থাকায় ক্ষতি বাড়বে। আইসিএমআর এর নির্দেশ মেনে ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত বলে জানিয়েছেন তারা।
চিঠিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনের সবিস্তারে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় পিপিই সহ প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম ব্যবস্থা যাতে স্বাস্থ্য ভবন করে তা জানানো হয়েছে।
যদিও মুখ্যসচিব ও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন তাদের। জানানো হয়েছে সুরক্ষার বিষয়ে যতটা সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।