আমাদের ভারত, সিউড়ি, ২৪ মার্চ: বন্ধ দরজা। এ দরজা ও দরজা ঘুরে ঘুরে গলা ফাঁটিয়েও মিলছে না সাড়া। সবাই ত্রস্ত। যে যার মত খাবার দাবার, প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে সোজা ঢুকেছেন ঘরে। লকডাউন মহল্লায় মহল্লায়, পাড়ায় পাড়ায়। সেই লকডাউনেই দিশেহারা ভুট্টো, লালু, ভুলুরা। এরা সকলেই রাস্তার কুকুর। এবাড়ি ওবাড়ির উচ্ছিষ্টেই চলে দিন। করোনা আতঙ্কে জেরবার মানুষ ঘরবন্দি হওয়ায় খাদ্য সংকটে ফেলেছে এদের। এরই মধ্যে নেতিয়ে পড়েছে এদের অনেকেই। কোনো বাড়ি থেকেই আর মিলছে না খাবার। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো অসংখ্য সারমেয়দের বাঁচাতেই এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন সিউড়ির একদল মানুষ। জোগান দিচ্ছেন খাবারের। শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে ঘুরে রাস্তায় থাকা সারমেয়দের মুখে তুলে দিচ্ছেন অন্ন। শুধু একদিন নয়, লকডাউন হওয়ার দিন থেকে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এভাবেই দেওয়া হবে পথ কুকুরদের খাবারের জোগান বলে নিশ্চিত করেছেন মানবিক উদ্যোগের কান্ডারীরা।
কেউ ছোটো ব্যবসায়ী, কেউ টোটো চালক, কেউ ছাত্র তো কেউ আবার বেকার। নিজেরা আতঙ্কিত করোনায়। তারমধ্যেও তাদের মন কেঁদেছে পথ কুকুরদের জন্য। তাপস সিং ছোটো ব্যবসায়ী। সিউড়ি সমন্বয় পল্লির বাসিন্দা। মূল উদ্যোক্তা তিনিই। সাথে পেয়েছেন ছেলে, ভাই বন্ধুদের। বাড়ির দাওয়ায় রান্না করেছেন খিচুরি। তাতে দিয়েছেন চিকেন, সবজি, আলু। মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রায় পঞ্চাশ কেজি চালের খিচুরি টোটোতে চাপিয়ে ঘুরেছেন সিউড়ি এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। তাপস সিংহের কথায়, ‘‘ভয়াবহ সঙ্কটের দিনে আমরা সবাই নিজে কি করে বাঁচব সেই চিন্তায় দিশেহারা। চিন্তা আমারও আছে। প্রতিদিন বাড়ির সামনে বেশ কিছু কুকুরকে খাবার দেওয়া আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। এই সময় এদের চিন্তাটাও মাথায় এসেছে। তাই চেষ্টা করছি যদি কিছু করতে পারি।’’
তাপস সিংহের ডাকে সাড়া দিয়েছেন ছাত্র ঋতম সিংহ। রান্নায় সাহায্য করেছেন। সাড়া দিয়েছেন তুষার সিংহ। জিনিসপত্র জোগার দিয়েছেন। সাড়া দিয়েছেন টোটো চালক বৃন্দাবন দাস। তার টোটোতেই ঢেকচি ভর্তি খিচুরি চাপিয়ে গোটা সিউড়ি শহর জুড়ে অগণিত পথকুকুরদের মুখে তুলে দিয়েছেন অন্ন। ধনঞ্জয় সিংহ নিজে বেকার, সামান্য প্যান্ডেল ব্যবসায়ী ধনাই মন্ডল, এগিয়ে এসেছেন তারাও। এরা টোটোতে চেপে শহরে ঘুরেছেন দিনভর। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পথ কুকুর দেখলেই ঢেকচি ভর্তি খিচুরি শালপাতায় ঢেলে নামিয়ে দিয়েছেন তাদের মুখের সামনে। নেতিয়ে যাওয়া লালু, ভুলু, ভুট্টোরা সেই শালপাতা চেটেই যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণ।