আমাদের ভারত, বাংলাদেশ, ৮ সেপ্টেম্বর: সরকারি দলের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলা ও মহানগরে গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন ও জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর গতানুগতিক বক্তব্যে হতাশ সংখ্যালঘুরা। শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই মন্তব্য করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত।
রাণাবাবু বলেন, শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বৃহস্পতিবার যে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান করেছেন, এর পরবর্তীতে আমরা সামাজিক গণমাধ্যমে লক্ষ্য করেছি অনুষ্ঠানের গতানুগতিক বক্তব্যের কারণে সংখ্যালঘু জনগণ বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় হতাশ হয়েছে। এই হতাশার কারণ হলো তাঁদের আশা ছিলো প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু বক্তব্য থাকবে। কিন্তু তা না থাকায় তারা সামগ্রিকভাবে হতাশা ব্যক্ত করেছে। এটি সরকারের বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
শুক্রবার খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলা ও মহানগরসমূহে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন জেলায় টেলিকনফারেন্সে এ্যাড. দাশগুপ্ত এ কথা বলেন। বিগত নির্বাচনে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এসব কর্মসূচিতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক নেতৃবৃন্দসহ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চাভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
রাণা দাশগুপ্ত বলেন, “আজকের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নয়। দেশের সংবিধান আজও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হতে পারেনি। বিগত ৫২ বছরে প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের ধর্মের যথেচ্ছ রাজনৈতিক ব্যবহার ও চর্চার কারণে রাষ্ট্র ও সমাজের তৃণমূলে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়েছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হারকে আরও কমিয়ে আনার জন্য সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আবারও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালাতে পারে। এতে গণতান্ত্রিক ধারা ভবিষ্যতে বিপন্ন হতে পারে। এ ব্যাপারে সদা সতর্ক ও সচেতন ভূমিকা পালনের সময় এসেছে।”
খুলনা জেলা ও মহানগর কমিটির উদ্যোগে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে জেলা সভাপতি বিমান বিহারী রায় অমিত, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দাস, মহানগর সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে কর্মসূচি পালিত হয়। যশোর জেলা সভাপতি সন্তোষ কুমার দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষালের নেতৃত্বে শহরের চিত্রা মোড়ে, বাগেরহাট জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবপ্রসাদ ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক মিলন ব্যানার্জির নেতৃত্বে মসনী রাধা মদনমোহন মন্দির চত্বরে, সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীলের নেতৃত্বে পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়ি চত্বরে, মেহেরপুর জেলা আহ্বায়ক মাধব চন্দ্র ভাস্কর ও সদস্য সচিব সুব্রত সাহা বাপ্পার নেতৃত্বে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে, নড়াইল জেলা আহ্বায়ক মলয় কান্তি নন্দী ও সদস্য সচিব রঞ্জিত কুমার টিকাদারের নেতৃত্বে জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
অপরদিকে রাজশাহী মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ রাজকুমার সরকার, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ, জেলা সাধারণ সম্পাদক অসিত কুমার ঘোষের নেতৃত্বে নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে হনুমানজীর আখড়ার সামনে গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়ের নেতৃত্বে শহরের বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে, নাটোর জেলা সভাপতি চিত্ত রঞ্জন সাহার নেতৃত্বে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে, সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি সুকুমার চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক নরেশ চন্দ্র ভৌমিকের নেতৃত্বে শহরের কেন্দ্রীয় মন্দির মহাপ্রভুর আখড়ায়, জয়পুরহাট জেলা আহ্বায়ক রতন কুমার খাঁ ও সদস্য সচিব স্বপন কুমার তালুকদারের নেতৃত্বে আবুল কাশেম ময়দানে, বগুড়া জেলা সভাপতি এন সি বাড়ৈ ও সাধারণ সম্পাদক তপন চক্রবর্ত্তীর নেতৃত্বে সাতমাথা মোড় সনাতন মন্দিরে এবং নওগাঁ জেলা আহ্বায়ক পীযুষ কুমার সরকার ও সদস্য সচিব প্রণব রঞ্জন বসাকের নেতৃত্বে মুক্তির মোড় শহীদ মিনার চত্বরে গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রাঙামাটি জেলা সম্মেলন আজ ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শহরের উপজাতি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত জেলা সভাপতি দীপন কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার চক্রবর্তী, শ্যামল পালিত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ, আইনজীবী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাড. রাজীব চাকমা। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য চট্টগ্রাম ক অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে অরূপ মুৎসুদ্দীকে সভাপতি ও ইন্টু মনি তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট রাঙামাটি জেলা কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটি নতুন জেলা কমিটির বাকি সদস্যদের মনোনীত করবে।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা ও মহানগরসমূহে, ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সিলেট বিভাগের জেলা ও মহানগরসমূহে, ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের জেলা ও মহানগরসমূহে, ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিভাগের জেলা ও মহানগরসমূহে এবং আগামী ২২-২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কেন্দ্রীয় গণঅনশন ও গণসমাবেশ কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া আগামী ৬ অক্টোবর শুক্রবার বেলা ২টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।