সৌমিত্র খাঁ নয়, যুব মোর্চার কমিটি ভেঙে দিয়ে মুকুল রায়কে কড়া বার্তা দিলেন দিলীপ ঘোষ

প্রদীপ দাস,আমাদের ভারত, কলকাতা, ২৪ অক্টোবর: সৌমিত্র খাঁকে অন্ধকারে রেখেই যুব মোর্চার সমস্ত জেলা কমিটি ভেঙে দিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, অনিবার্য কারণবশত এই কমিটি ভেঙে দেওয়া হল। কিন্তু ভেঙে দেওয়ার আসল কারণ কি তা অবশ্য তিনি জানাননি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, যুব মোর্চা কমিটি ভেঙে দিয়ে তিনি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ নয়, মুকুল রায়কে বার্তা দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিজেপির সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী এবং সংঘের ক্ষেত্রীয় প্রচারক প্রদীপ জোশিকেও বার্তা দিয়েছেন।

জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত জেলা সভাপতিরাই যুব মোর্চার কাজ দেখাশোনা করবেন। দিলীপ ঘোষের এই ঘোষণার পরেই বিজেপির অন্দরে তীব্র শোরগোল পড়ে গেছে। শুধু বিজেপি নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যেও আলোড়ন শুরু হয়েছে, হঠাৎ বিধানসভা ভোটের মুখে এই সিদ্ধান্ত কেন নিলেন দিলীপ ঘোষ?

এদিকে জেলা কমিটি বাতিলের একদিন পরেই আজ সকালে যুব মোর্চার সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন সৌমিত্র খাঁ। তিনি বিজেপি যুব মোর্চা ওয়েস্টবেঙ্গল অফিশিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখেছেন, আমি চাই বিজেপিকে সরকার আসতেই হবে। তাই হয়তো আমার অনেক ভুল ছিল যা দলের ক্ষতি করেছে। তাই আমি ইস্তফা দেব। এর পরে তিনি গ্রুপ ছেড়ে দেন। কিন্তু কেন দিলীপ ঘোষ এই সিদ্ধান্ত নিলেন এই নিয়ে দলের মধ্যে নানা কথা শোনা যাচ্ছে।
দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, জেলা কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ভুল করেছেন সৌমিত্র খাঁ।
এর আগেও যুব মোর্চার রাজ্য কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। দিলীপ ঘোষের নির্দেশে সেই কমিটি স্থগিত রাখতে হয়েছিল সৌমিত্র খাঁ কে। কারণ তিনি জেলা কমিটি ঘোষণা না করেই রাজ্য কমিটি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। এবার জেলা কমিটি তৈরির ক্ষেত্রও সাংগঠনিক কোনও নিয়ম মানা হয়নি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সেই কারণেই সভাপতির ক্ষমতাবলে গতকাল সব জেলা কমিটি ভেঙে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ।

বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, সৌমিত্র খাঁ যে জেলা কমিটিগুলি তৈরি করেছিলেন সেই কমিটি পুরোপুরি দিলীপ ঘোষ এবং দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত চ্যাটার্জিকে অন্ধকারে রেখে তৈরি হয়েছিল। তাদের সঙ্গে তিনি কোনো আলোচনাই করেননি। এমনকি বিজেপির জেলা সভাপতিদের সঙ্গেও নাকি আলোচনা করা হয়নি। তিনি মূলত মুকুল রায়ের নির্দেশেই এই কাজ করেছেন। কারণ সৌমিত্র খাঁ দায়িত্ব নেওয়ার পর খুব দ্রুত তাঁকে জেলা কমিটির ঘোষণা করতে হয়েছিল। কিন্তু প্রতিটি জেলায় সৌমিত্র খাঁর সেই যোগাযোগ ছিল না। এজন্য তিনি মুকুল রায়ের ওপর নির্ভর করেছিলেন। মুকুল রায়ের দেওয়া নামের তালিকা ধরেই তিনি জেলা সভাপতি সম্পাদকসহ জেলা কমিটির পদাধিকারীদের নাম চূড়ান্ত করেছিলেন। এজন্য মুকুল রায় সঙ্গে নিয়েছিলেন বিজেপির সহ-সাংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীকে, বলে দিলীপ ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য। এক্ষেত্রেও সংঘের ক্ষেত্রীয় প্রচারকের নাম জড়িয়ে পড়েছে। এই তালিকার যাতে কেউ বিরোধিতা না করতে পারে সেই জন্য কৌশলী মুকুল রায় ক্ষেত্রীয় প্রচারক প্রদীপ জোশির সঙ্গে আলোচনা করে নেন বলে তাঁদের বক্তব্য।

কিন্তু, নিয়ম অনুযায়ী যুব মোর্চার জেলা কমিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণত জেলা সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে করতে হয় এবং সেটা প্রদেশ সভাপতি অনুমোদনের পরেই ঘোষণা করতে হয়। কিন্তু সৌমিত্র খাঁ এক্ষেত্রে কোনওটাই করেননি। তিনি মূলত মুকুল রায়ের উপর নির্ভর করেছেন। মুকুল রায় এরপর অমিতাভ চক্রবর্তীকে দলে টেনে সেটা প্রদীপ জোশির কাছ থেকেও অনুমোদন করিয়ে নেন। দিলীপ ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, মুকুল রায়ের ধারণা ছিল প্রদীপ জোশির অনুমোদনের পর দিলীপ ঘোষ এই কমিটি মেনে নিতে বাধ্য হবেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। তাতে জানানো হয়, বহু ক্ষেত্রেই বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মীদের বাদ দিয়ে তৃণমূল থেকে আসা নেতা-নেত্রীদের যুব মোর্চার স্থান দেওয়া হয়েছে। এতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন দিলীপ ঘোষ এবং তার পরেই তিনি এই কমিটি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা করেন।

তবে বিজেপির একটা বড় অংশ দিলীপ ঘোষের সিদ্ধান্তে
খুশি। তাদের বক্তব্য, “বিজেপি প্রদেশ সভাপতি আর সংগঠন মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে ক্ষেত্র প্রচারকের সাথে পরামর্শ করে অমিতাভ ও মুকুল রায় বিজেপির সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দিলীপ ঘোষের এটা বোল্ড সিদ্ধান্ত। প্রদেশ সভাপতি যা করেছেন তা সার্বিক ভাবে ঠিক হয়েছে। কারণ পদ্ধতি গত ভাবে জেলা সভাপতিদের সাথে চর্চা করে প্রদেশ সভাপতির অনুমোদন নিয়ে টিম ঘোষনা করা উচিত ছিল। সৌমিত্র খাঁ বিজেপিতে নুতন, তাই পদ্ধতি না জানার জন্য এটা করে ফেলেছেন, এখন নুতন করে টিম তৈরি হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *