রাজেন রায়, কলকাতা, ৫ জানুয়ারি: প্রত্যেক বছরে ইন্টারনেটে ভেসে ওঠে, ৫ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। যদিও ইন্টারনেটে ভুল তথ্য রয়েছে এবং ওই দিন তাঁর জন্মদিন নয়, এমন দাবি বারবারই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাহলে তাঁর জন্মদিন কবে সে তথ্য খোলসা করে কোনওদিন বলেননি তিনি। নিজের জন্মদিন উদযাপন থেকে তিনি অনেক বেশি সাধারণ মানুষকে নিয়ে চিন্তিত, কাজের মধ্যেই তাঁর আনন্দ তা বারবারই জানিয়েছেন তিনি। পরপর দুবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ফের বিধানসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে তিনি এবং তার গঠিত দল তৃণমূল।
তবে সবকিছু ছাড়িয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মানচিত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, তা ভারতবর্ষের প্রত্যেক রাজনৈতিক দলই স্বীকার করে। বিতর্ক যেন চিরকাল পিছু করে বেড়ায় তাঁকে। তবু তিনি যে ‘অগ্নিকন্যা’। তাঁকে দমিয়ে রাখার সাধ্যি কার! নানা কুৎসা, অপপ্রচার, প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মধ্যেও আলাদা করেই গড়েছেন নিজের পরিচয়। বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে তিনি আজ ‘দিদি’। তাই তার ইন্টারনেট ঘোষিত জন্মদিনেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নেওয়া যাক তাঁর জীবনের কিছু জানা-অজানা কাহিনী…
১. তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বহু বিরোধী। তবে সত্যিই তিনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিতা। ইতিহাস নিয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি পাস করার পর ইসলামিক হিস্ট্রিতে করেছেন মাস্টার ডিগ্রি। এছাড়াও বি.এড এবং এলএলবি’র ডিগ্রিও রয়েছে তাঁর। যদিও একসময় তিনি তাঁর নামের পাশে ডক্টর লিখতেন, কিন্তু বিরোধী থাকাকালীনই তা নিজেই বাতিল করে দিয়েছিলেন।
২. রাজনীতিতে আসার আগে একসময় স্টেনোগ্রাফার হিসাবেও কাজ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও কখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষয়ত্রীর কাজ, আবার কখনও প্রাইভেট টিউটর বা সেলসগার্ল, এসব কাজও করেছেন তিনি।
৩.নিয়মিত শরীরচর্চা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার ট্রেডমিলে হাঁটেন মমতা। পথসভা বা মিছিলে বেরোলে একসময় ১০ কিলোমিটারও হেঁটেছেন মমতা।
৪. রোজ কঠিন ডায়েট মেনে খাওয়া দাওয়াও করেন তিনি। বেশি তেল যুক্ত ভাজা খাবার পছন্দ করেন না একদমই। তবে তেলেভাজা দেখলে নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না। বিশেষ করে আলুর চপ তাঁর খুবই পছন্দের। এছাড়াও মুড়ি, চা, চানাচুর ও চকোলেটও রয়েছে পছন্দের তালিকায়।
৫. সাদা রঙের একরঙা পাড়যুক্ত তাঁতের শাড়ি পরতে পছন্দ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ধনেখালির তাঁত ছাড়া কিছু গায়ে তোলেন না তিনি।
৬. মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ কলকাতার হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের টালির বাড়িতেই থাকেন মমতা। অল্প বৃষ্টিতেই বাড়ির সামনে জমে যায় জল। তবু সে বাড়ি ছাড়েননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও সাধারণ জীবন যাপন করতে ভালোবাসেন তিনি।
৭. গান শুনতে খুব পছন্দ করেন মমতা। বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং নজরুল গীতি তিনি খুব ভালোবাসেন। এছাড়াও আধুনিক শিল্পীদের গানও শোনেন তিনি।
৮. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নিজেকে হারাতে প্রায়শয়ই ছুটে যান পাহাড় বা জঙ্গলে। প্রকৃতি নিয়ে ফটোগ্রাফিও করেন। দার্জিলিং এবং পুরুলিয়া, মেদিনীপুর তাঁর বিশেষ পছন্দের ঘোরার জায়গা। বিদেশ বা দেশের সৌন্দর্যের পেছনে না ছুটে রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেশি আকর্ষণ করে তাঁকে। সেই কারণেই বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে প্রশাসনিকভাবে প্রচুর সাহায্য করেন।
৯. তার অন্যতম শখ কবিতা পাঠ এবং লেখা তার সঙ্গে ছবি আঁকা। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। মুখে মুখে ছড়াও তৈরি করতে পারেন এই নেত্রী।
১০. গ্রাম বাংলার লোকশিল্পের প্রতি গভীর অনুরাগ রয়েছে মমতার। কাউকে উপহার দিতে হলে লোকশিল্পের বিভিন্ন বস্তুই দেন। নিজেও ব্যবহার করেন বহু নিত্যব্যবহার্য জিনিস।
১১. প্রকৃত অর্থেই প্রযুক্তিপ্রেমী তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় চূড়ান্ত সচল থাকেন সর্বদা। সেগুলিকে হাতিয়ার করেই মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করে চলেন। ফেসবুকে লাইভ চ্যাট এবং নিয়মিত টুইটও করেন তিনি। সাধারণ জীবন হোক বা সোশ্যাল মিডিয়া সবেতেই সক্রিয় থাকতে ভালোবাসেন তিনি।